ছোলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুনআসসালামু আলাইকুম, সুপ্রিয় পাঠক ছোলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন ও ছোলা বেশি খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
ছোলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
কেননা এই আর্টিকেলে ছোলার সব গুণাগুণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। পাশাপাশি ছোলার বৈজ্ঞানিক নাম ও ছোলা গাছের বর্ণনা সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে। এবং আপনার দেহের কোন কোন সমস্যায় আপনি ছোলা খেতে পারেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
সূচিপত্র: ছোলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

উপস্থাপনা

সুপ্রিয় পাঠক, মানুষের দেহের নানান সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় ছোলা খাওয়ার মাধ্যমে। কেননা ছোলাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও জিংক রয়েছে। যা মানুষের দেহের নানান সমস্যার সমাধান করে থাকে। তাই আপনি যদি নিজের দেহের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান তবে অবশ্যই নিয়মিত ছোলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আপনার দেহের কোন কোন সমস্যায় আপনি ছোলা খাবেন সেই সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে আর্টিকেলে।

ছোলা (বৈজ্ঞানিক নাম: Cicer Arietinum)

অত্যন্ত প্রোটিন সমৃদ্ধ ও ডাল জাতীয় খাদ্যশস্য হলো ছোলা। যা মধ্যপ্রাচ্য, ভারতীয় উপমহাদেশ ও পশ্চিম এশিয়ায় চাষ করা হয়ে থাকে। বিশ্বের প্রতিটা দেশেই ছোলার ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। কেননা ছোলা খাওয়ার ফলে মানব দেহের অনেক উপকার হয়ে থাকে।

ছোলা গাছের বর্ণনা

সাধারণত ২০ সে.মি থেকে ১ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে ছোলার গাছ। ছোলা গাছের কাণ্ডের দুই পাশে পালকের মতো পাতা বিস্তৃত থাকে। ২-৩ টি করে ডাল বীজ থাকে একটি বীজপত্রে। ফুল সাধারণত সাদা রংয়ের হয় আবার কখনো কখনো লালচে নীল রঙের হয়ে থাকে। ছোলার চাষ করার জন্য বেশি বৃষ্টিপাত এলাকা বেছে নিতে হয়।
কারণ ক্রান্তীয় বা উপক্রান্তীয় জলবায়ু ও বাৎসরিক প্রায় ৪০০-৪২৫ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয় ছোলা চাষ করতে। সঠিকভাবে পরিচর্যা ও নিয়মিত আগাছা পরিষ্কারের ফলে ছোলা চাষ অত্যন্ত ভালো হতে পারে সব ধরনের জমিতে। ছোলার গাছে তেমন রোগবালাই দেখা যায় না তবে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ছোলা চাষ করতে হলে।

ছোলার প্রকারভেদ

বর্তমান বিশ্বে সাধারণত ২ ধরনের ছোলা দেখতে পাওয়া যায়। সেগুলো হলো দেশি ছোলা এবং কাবুলি ছোলা।
  • দেশী ছোলা
দেশি ছোলাতে মূলত আঁশের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি থাকে। আর দেশি ছোলার রঙ অনেক গাঢ় প্রত্যক অমসৃণ অবস্থায় থাকে। যা ভারতীয় উপমহাদেশ, মেক্সিকো, ইরান ও ইথিওপিয়াতে চাষ করা হয়।
  • কাবুলি ছোলা,
কাবুলি ছোলার রং তেমন গারো নয় এবং ত্বক মসৃণ অবস্থায় থাকে। কাবুলি ছোলার গুঁড়ো দিয়ে বেসন তৈরি হয়। যা থেকে অনেক রকমের খাবার যেমন পাকোড়া, বেগুনি ও পেয়াজি তৈরি করা হয়ে থাকে। সাধারণত উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ ইউরোপ, আফগানিস্তান ও চিলিতে কাবুলি ছোলার চাষ করা হয়। তবে বর্তমান সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশেও কাবলি ছোলার চাষ করা হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে।

ছোলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

আমরা সকলেই ছোলার গুণ সম্পর্কে জানি। ছোলাতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার ও ভিটামিন রয়েছে। তাছাড়াও ছোলাতে ফ্যাটের পরিমাণ খুবই কম সেজন্য যাদের অতিরিক্তর ওজন রয়েছে তারা নিয়মিত ছোলা খাওয়ার ফলে দেহের ওজন কমতে থাকে খুব দ্রুত। তাছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ছোলা অনেক কাজ করে থাকে। তবে ছোলা কাঁচা অবস্থাতে খেলে খুব দ্রুত শরীরের সমস্যা নিরোধনে কাজ করে থাকে।
প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে এক বাটি পানির মধ্যে কয়েকটা ছোলা ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে উঠে ফ্রেশ হওয়ার পর খালি পেটে সেই ছোলা খান। তাহলে কয়েকদিনের মধ্যে আপনার শরীরের অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে যাবে। নিয়মিত ছোলা খাওয়ার ফলে আপনি কি কি সমস্যা থেকে উপকৃত হবেন সেই সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
  • বদ হজম দূর করতে
সিদ্ধ করা ছোলার তুলনায় ভেজানো কাঁচা ছোলাতে পুষ্টিগুণ অত্যন্ত বেশি থাকে। তবে কাঁচা ছোলা হজম হতে সময় একটু বেশি লাগে। সে কারণে আপনি যদি কাঁচা ছোলা খেতে চান তবে প্রথম অবস্থায় খুব অল্প পরিমাণে এবং ভাল করে চিবিয়ে খেতে হবে। কেননা কাঁচা ছোলাতে যে ফাইবার রয়েছে সে ফাইবার কে ভাঙতে পাচনতন্ত্রের একটু সময় বেশি লাগে। তবে কাঁচা ছোলা অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে আকস্থলীর নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই খুব অল্প পরিমাণে কাঁচা ছোলা খেতে হবে নিয়মিত তাহলে বদ হজম দূর হবে
  • ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়াতে
নিয়মিত ছোলা খাওয়ার ফলে শরীরের ইউরিক এসিড ও কিটেনিন অত্যন্ত বৃদ্ধি পায়। তার জন্য যাদের ইউরিক অ্যাসিড বেশি রয়েছে তারা কখনোই কাঁচা ছোলা খাবেন না। প্রয়োজনে ডক্টরের পরামর্শ নিন।
  • দেহের ওজন বৃদ্ধি করতে
আপনি যদি দেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান তাহলে আপনাকে ছোলার কাঁচা অবস্থায় খেতে হবে। কেননা রান্না করা ছোলায় তেল ও মসলার পরিমাণ থাকার কারণে তাতে গ্যাস্টিকের সমস্যা হতে পারে। তাই ওজন কমাতে কাঁচা ছোলা নিয়মিত খান।
  • শরীরের হাড় শক্ত করতে
মানব দেহের হাড় মজবুত ও শক্তিশালী করার জন্য আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের বিশেষ প্রয়োজন। কাঁচা ছোলা প্রচুর পরিমাণে এই উপাদান গুলো রয়েছে। তাই নিজের দেহের হার শক্ত করতে আপনার খাদ্য তালিকায় কাঁচা ছোলার ব্যবহার করতে পারেন। কাঁচা ছোলা খাওয়ার ফলে দেহের হাড় শক্ত ও মজবুত হয় পাশাপাশি কাজ করার সময় দেহে অতিরিক্ত শক্তি পাওয়া যায়।
  • খাদ্যনালী ঠিক রাখতে ছোলা খান
মানুষের শরীরের জীবাণু, মৃতপ্রায় কোষ ও রোগাক্রান্ত কোলেস্টেরলকে ধ্বংস করে দেহকে সুস্থ রাখার জন্য বিউটারেট নামক ফ্যাটি এসিডের প্রয়োজন হয়। শুধুমাত্র ছোলা খাওয়ার ফলেই দেহে ফ্যাটি এসিডের সৃষ্টি হয়ে থাকে। তার ফলে দেহের খাদ্যনালী ভালো থাকে ও দেহে ক্যান্সার হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
  • কফ সারাতে ছোলা খান
আঁশ জাতীয় খাবার থেকে ডায়াটারি ফাইবারের সৃষ্টি হয় যা শ্বাসনালী থেকে পুরনো কফ দূর করতে সাহায্য করে থাকে। আর ছোলা হলো একটি আঁশ জাতীয় খাবার। তাই কফের সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য নিয়মিত ছোলা খান। পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য, কফ ও কাশি চিরতরে নির্মূল করার জন্য ছোলার পাশাপাশি শাক খেতে পারেন।
  • চুলের যত্নে ছোলা খান
মানুষের দেহের সৌন্দর্য নির্ভর করে অনেকটা মাথার চুলের উপর। কেননা আপনি চুল যেভাবে রাখবেন আপনার দেহের সৌন্দর্য ঠিক সেভাবে প্রকাশ পাবে। তাই নিজের চুল ঠিক রাখার জন্য কাঁচা ছোলা খাওয়ার অভ্যাস করুন কেননা তাতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি৬ ও ভিটামিন-বি৯ রয়েছে। তাছাড়াও কাঁচা ছোলাতে প্রচুর পরিমাণে জিংক ও ম্যাঙ্গানিজ থাকে যা চুলের গোড়া শক্ত করে ও চুলের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে।
  • স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে ছোলা খান
স্বল্প সময়ের মধ্যে নিজের দেহের স্বাস্থ্য ঠিক করার জন্য নিয়মিত কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে রেখে সেটা খেতে পারেন। কেননা দেহ ঠিক করার জন্য আমিষ জাতীয় ও প্রোটিন জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। তাছাড়া আমি জাতীয় খাবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে। আর কাঁচা ছোলা খাওয়ার ফলে দেহে প্রোটিন ও আমিষের ঘাটতি খুব সহজে পূরণ হয়ে যায় যার ফলে খুব অল্প সময়ে স্বাস্থ্যবান হওয়া সম্ভব।
  • দেহের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে ছোলা খান
কাঁচা ছোলাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম এর মত খনিজ পদার্থ রয়েছে। যা দেহের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এবং তাতে করে দেহের হার্ট সুস্থ থাকে।
  • হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতে ছোলা খান
খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর জন্য ফাইবার ও প্রোটিনের প্রয়োজন পড়ে। কাঁচা ছোলা নিয়মিত খাওয়ার ফলে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে কাজ করে থাকে। কোলেস্টেরলের মাত্রা যদি কম থাকে তবে দেহের হৃদপিন্ডের সুরক্ষা পাওয়া যায় আর সেই কাজ করে থাকে কাঁচা ছোলা। তাই নিজের দেহের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা দূর করার জন্য কাঁচা ছোলা পানিতে ভিজিয়ে রেখে নিয়মিত সেই ছোলা খেতে হবে।
  • ত্বকের যত্নে ছোলা খান
আপনার দেহের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত কাঁচা ছোলা খাওয়ার অভ্যাস করুন। কেননা ছোলাতে প্রচুর পরিমাণ জিংক নামক পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা ত্বককে মসৃণ, সতেজ ও কোমল করে তুলবে। পাশাপাশি কাঁচা ছোলা খাওয়ার ফলে ত্বকের উপরে যেসব ব্রণের দাগ রয়েছে সেইসব দাগ খুব অল্প সময়ে নিরাময় করা সম্ভব।
পাশাপাশি নিজেদের মুখের বলিরেখা কমাতে ও ব্রণের দাগ দূর করতে কয়েকটা কাঁচা ছোলা রাতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সেই ভেজানো ছোলার পানি দিয়ে নিজের ত্বক পরিষ্কার করুন ও সেই কাঁচা ছোলা খান। তাহলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আপনার ত্বক খুব সুন্দর, কোমল ও মসৃণ হবে।
  • ঋতুস্রাবের কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে ছোলা খান
সাধারণত মেয়ে মানুষ ঋতুস্রাবের সময় প্রচুর পরিমাণে কষ্ট ভোগ করে থাকে। এবং সেই সময় তাদের শরীর অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে কারণ তাদের শরীরে আয়রন ও প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দেয়। আর সেই সময় মেয়েরা যদি কাঁচা ছোলা ও গুড় একসাথে খাই তবে শরীরে আয়রন ও প্রোটিনের ঘাটতি দূর করা সম্ভব। তবে সেটা নিয়মিত খেতে হবে। কেননা গুড় মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর খাদ্য। যা শরীরের দুর্বলতা দূর করে শরীরের শক্তি যোগায়।

ছোলা বেশি খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জানুন

প্রতিটা খাবারের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বিদ্যমান রয়েছে। সেজন্য আপনি যে খাবার গ্রহণ করুন না কেন কখনো সেটা অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া ঠিক হবে না। তাতে করে আপনার দেহের উপকারের চাইতে ক্ষতি বেশি হতে পারে। তাই নিজের দেহকে ঠিক রাখার জন্য পরিমাণ মতো খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি নিয়ম মেনে খাবার খেতে হবে।

কেননা আপনি যদি সকালের খাবার দুপুরে খান বা দুপুরের খাবার রাতে খান তাহলে সেটা আপনার শরীরের জন্য কখনোই কল্যাণ বয়ে আনবে না। তাই নিজের দেহকে ঠিক রাখতে ও খাদ্যের সঠিক পুষ্টি উপাদান পাওয়ার জন্য যে কোন খাদ্য নিয়মিত ও পরিমান মত খান। তবে আপনার দেহের সমস্যা দূর হয়ে আপনার দেহ সুন্দর হবে।

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক, আর.বি.আর ব্লগের এই আর্টিকেলে ছোলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। যেকোনো বিষয়ের সঠিক তথ্য সবার আগে জানতে আর.বি.আর ব্লগের গুগল নিউজে ফলো দিয়ে রাখুন। আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url