অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

নিম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানুনআসসালামু আলাইকুম, সুপ্রিয় পাঠক অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন ও অ্যালোভেরার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে চাইলে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
কেননা এই আর্টিকেলে আমরা অ্যালোভেরা সকল বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করেছি। পাশাপাশি আপনি কোন কোন সমস্যায় অ্যালোভেরার ব্যবহার করবেন তা সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে। তাই অ্যালোভেরা সঠিক ব্যবহার জানতে এই আর্টিকেল সম্পূর্ণ পড়ুন।
সূচিপত্র: অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

ঘৃতকুমারী (বৈজ্ঞানিক নাম: Aloe vera)

অ্যালোভেরা মূলত রসালো প্রজাতির উদ্ভিদ। অ্যালোভেরা গাছ কাটাযুক্ত ক্যাকটাসের মত। সাধারণত লিলি প্রজাতির উদ্ভিদ বলে অ্যালোভেরা কে ধরা হয়। আফ্রিকার মরুভূমি অঞ্চলে অ্যালোভেরার আদি নিবাস। প্রায় ৬ হাজার বছর পূর্বে মিশরে অ্যালোভেরা উৎপত্তি লাভ করেছিল। ভেষজ চিকিৎসা শাস্ত্রে অ্যালোভেরার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে।

অ্যালোভেরার বৈশিষ্ট্য

বহুজীবী ভেষজ উদ্ভিদ হলো অ্যালোভেরা এবং দেখতে খানিকটা আনারস গাছের মতো।অ্যালোভেরার পাতা অনেক পুরু এবং দুই ধারে করাতের মতো কাটাযুক্ত এবং ভেতরে লালার মত পিচ্ছিল শাস রয়েছে। অ্যালোভেরার চাষ ভালো হয় দোআশ ও অল্প বালি মিশ্রিত জমিতে। অ্যালোভেরা চাষ করলে নিয়মিত সেচের ব্যবস্থা থাকতে হবে আবার গাছের গোড়ায় যাতে পানি না থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

শিকড় থেকে গজানো শাখার সাহায্যে অ্যালোভেরার বংশ বিস্তার ঘটে থাকে।অ্যালোভেরাতে রয়েছে প্রায় ২০ রকমের খনিজ পদার্থ। যা মানুষের দেহের ২২ টি অ্যামিনো এসিডের প্রয়োজন পূরণ করে।

অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

বর্তমান সময়ে মানুষের দেহের অনেক সমস্যার সমাধানে অ্যালোভেরা কাজ করে থাকে। কেননা অ্যালোভেরা সম্পূর্ণ ঔষধি গুনাগুন বিশিষ্ট একটা উদ্ভিদ। এর ব্যবহার প্রাচীন আমল থেকেই হয়ে আসছে। মানুষের দেহের যে কোন সমস্যা সমাধানে সবচাইতে নির্ভরযোগ্য প্রাকৃতিক ঔষধ হলো অ্যালোভেরা।
কেননা প্রাচীন আমলে ভেষজ চিকিৎসা শাস্ত্রে অ্যালোভেরার ব্যবহার করা হতো সবচাইতে বেশি। বর্তমান সময়ে ঘরোয়া ভাবে অ্যালোভেরার জেল, জুস তৈরি করে খেলে অনেক সমস্যা থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব। তার জন্য কোন ডক্টরের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। আপনার দেহের কোন কোন সমস্যায় আপনি অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে পারবেন তা নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা
অ্যালোভেরার জুস নিয়মিত পান করলে পেটের সমস্যা খুব দ্রুত সেরে যাবে। পাশাপাশি সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে কোষ্ঠকাঠিন্য খুব অল্প সময়ে দূর করা সম্ভব। কেননা অ্যালোভেরার জেলে ২০ রকমের অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে যা ব্যাকটেরিয়া ও ইনফ্লামেশন রোধ করে খাবার হজম করতে সাহায্য করে থাকে। পাশাপাশি বুক জ্বালাপোড়া রোধ করতেও সাহায্য করে। তাই পেটের সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি লাভের জন্য নিয়মিত অ্যালোভেরা খেতে পারেন।
  • দেহের ক্লান্তি দূর করা
যদি আপনার দেহ অতিরিক্ত পরিমাণে দুর্বল মনে হয় তাহলে অবশ্যই নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস খেতে পারেন। তাহলে খুব দ্রুত দেহের ক্লান্তি দূর হবে, দেহ সতেজ ও সুন্দর হবে।
  • উচ্চরক্তচাপ কমানো
নিয়মিত অ্যালোভেরা খাওয়ার অভ্যাস করলে উচ্চ রক্তচাপ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কমানো সম্ভব। কেননা অ্যালোভেরার ঔষধি গুণ খুব দ্রুত রক্তচাপ কমায় ও রক্তে কোলেস্টেরল এবং চিনির মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে অতি তাড়াতাড়ি কাজ করে থাকে।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে
অ্যালোভেরায় রয়েছে অ্যালো-ইমোডিন যা ক্যান্সারের বিস্তার কে রোধ করে। বিশেষ করে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে অ্যালোভেরার কোন বিকল্প নেই।
  • মুখের ঘা ভালো করতে
যাদের মুখে ঘা রয়েছে তারা নিয়মিত অ্যালোভেরার জেল মুখের ঘা যুক্ত স্থানে লাগালে খুব দ্রুত তা সেরে যাবে। পাশাপাশি অ্যালোভেরার জুস নিয়মিত খাওয়ার ফলে পেটের ভিতরের ব্যাকটেরিয়া নির্মূল হয়ে যায় এবং শরীরের কোন ক্ষত জায়গা থাকলে তা খুব দ্রুত সরে ওঠে।
  • মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে
অ্যালোভেরায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যা মুখের জীবাণু দূর করে মাড়ি থেকে রক্ত পড়া ও মাড়ি ফোলা দূর করে। অ্যালোভেরার জেল দিয়ে নিয়মিত মুখ পরিষ্কার করলে মুখের দুর্গন্ধ খুব দ্রুত কমে যাবে।
  • চুল সুন্দর করতে
যাদের মাথায় খুশকি রয়েছে তারা নিয়মিত অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে পারেন। কারণ মাথার খুশকি দূর করতে ও চুলের গোড়া শক্ত এবং মজবুত করার জন্য অ্যালোভেরার কোন বিকল্প নেই। অ্যালোভেরাতে থাকা উপাদানের কারণে চুল খুব দ্রুত সুন্দর হয়।
  • ত্বকের যত্নে
যাদের মুখে ব্রণ, দাগ রয়েছে তারা নিয়মিত অ্যালোভেরার জেল ব্যবহার করতে পারেন। কেননা অ্যালোভেরার জেলে অ্যান্টি ইনফ্লামেনটরি উপাদান থাকার কারণে ব্রণের দাগ দূর করে ত্বককে সুন্দর ও মসৃণ রাখে। পাশাপাশি ত্বকের ইনফেকশন দূর করতে অ্যালোভেরার কোন বিকল্প নেই। তাই যারা ত্বকের দাগ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগেন তারা নিয়মিত অ্যালোভেরার জেল ব্যবহার করতে পারেন।
  • ডায়াবেটিস রোধে
অ্যালোভেরার জুস নিয়মিত খাওয়ার ফলে রক্তে সুগারের মাত্রা ঠিক থাকে ও দেহে রক্ত সঞ্চালনে কোন সমস্যা হয় না। ডায়াবেটিস শুরুর দিকে নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস খেলে তা প্রতিরোধ করা সম্ভব রক্তে সুগার মাত্রা ঠিক থাকলে কখনোই আপনার ডায়াবেটিস হবে না। আর তার জন্য নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস খাওয়া প্রয়োজন।
  • অতিরিক্ত ওজন কমাতে
ক্রনিক প্রদাহের কারণে মানুষের শরীরে মেদ জন্মে অ্যালোভেরার জুসে অ্যান্টি ইনফ্লামেনটরি থাকার কারণে তা ক্রনিক প্রদাহকে রোধ করে অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে। পাশাপাশি অতিরিক্ত খাবার খেলে তা খুব দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে যাতে করে শরীরে ক্রনিক প্রদাহ বাসা বাঁধতে না পারে।
  • রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
আন্টি-ম্যাইকোবিয়াল ও অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান সমৃদ্ধ গাছ হলো অ্যালোভেরা। অ্যালোভেরার জুস নিয়মিত পান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাবে পাশাপাশি দেহ সুস্থ রাখার জন্য দেহের টক্সিন উপাদান নির্মূল করে দেহ সুস্থ, সুন্দর ও ক্লান্তিহীন থাকবে সব সময়।
  • হার্ট সুস্থ রাখতে
অ্যালোভেরার জুস নিয়মিত পান করলে হৃদযন্ত্র অনেক সচল থাকে। অ্যালোভেরা দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেক কমিয়ে দেয় ফলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক অবস্থায় আসে। পাশাপাশি রক্তে অক্সিজেন বহন করার কর্ম ক্ষমতা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। পাশাপাশি অ্যালোভেরার জুস খাওয়ার ফলে দূষিত রক্ত দেহ থেকে বেরিয়ে আসে ও রক্তকণিকা বৃদ্ধি করে। যার ফলে দীর্ঘদিন হৃদযন্ত্র সুস্থ এবং সক্রিয় থাকে, যার ফলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা অনেক কমে আসে।

অ্যালোভেরা ব্যবহারের অপকারিতা

প্রতিটা জিনিসের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া বিদ্যমান। যার কারণে অতিরিক্ত হারে কখনোই অ্যালোভেরা ব্যবহার করবেন না বা সেবন করবেন না। অতিরিক্ত হারে ব্যবহার করলে দেহের উপকারের চাইতে ক্ষতি বেশি হতে পারে। সে জন্যই আপনার সমস্যা অনুযায়ী অ্যালোভেরার জেল বা জুস ব্যবহার করবেন।

প্রয়োজনে রেজিস্টার্ড ডক্টরের পরামর্শ নিতে পারেন। এবং সঠিক উপকারিতা পাওয়ার জন্য পরিমাণ মতো ও নিয়মিত অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া কখনোই আপনার সঠিক উপকার পাবেন না।

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক, আর.বি.আর ব্লগ এই আর্টিকেলে অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছে। আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। যে কোন শিক্ষনীয় বিষয় জানতে আর.বি.আর ব্লগের সাথেই থাকুন। আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url