কালোজিরাতে থাকা বিভিন্ন উপাদান সমূহ

মধু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুনআসসালামু আলাইকুম, সুপ্রিয় পাঠক কালোজিরাতে থাকা বিভিন্ন উপাদান সমূহ ও কালোজিরা সংরক্ষণ করে রাখার সঠিক নিয়ম জানতে হলে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।পাশাপাশি কালজিরাতে কি কি উপাদান থাকে ও তা কিভাবে দীর্ঘ দিন ধরে সংরক্ষণ করে রেখে খাওয়া যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এই আর্টিকেলে। কালোজিরা নিয়মিত সেবনের ফলে আপনি কোন কোন সমস্যার হাত থেকে রেহাই পাবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এই আর্টিকেলটি পড়ুন।
সূচিপত্র: কালোজিরাতে থাকা বিভিন্ন উপাদান সমূহ

উপস্থাপনা

সুপ্রিয় পাঠক, কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও কালোজিরাতে কি কি উপাদান রয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এই আর্টিকেলে। পাশাপাশি আপনার দেহের কোন কোন সমস্যা সমাধানের জন্য আপনি কালোজিরা সেবন করবেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে আরটি খেলে। এবং কিভাবে কালোজিরা সংরক্ষণ করে রাখতে হয় ও কোন সমস্যায় কত পরিমাণে কালোজিরা খেতে হবে সেই সম্পর্কে বলা হয়েছে এই আর্টিকেলে।

কালোজিরা উৎপাদন প্রকিয়া

কালোজিরা মাঝারি আকৃতির একটি মৌসুমী গাছ। যাতে বছরে একবার ফুল ও ফল দেখা দেয়। এটি সাধারণত স্ত্রী এবং পুরুষ উভয় ধরনের হয়ে থাকে, যার রং নীলচে সাদা হয়, এবং পাঁচ পাপড়ি বিশিষ্ট হয়, একটি বাড়তি অংশ থাকে কিনারার দিকে, এর বীজ হয় তিন কোন আকৃতির, কালো রঙের ফলগুলো হয় গোলাকার এবং প্রত্যেকটি ফলে ২০ থেকে ২৫ টি করে বীজ দেখা যায়। বর্তমান বিশ্বে আয়ুর্বেদী ইউনানী কবিরাজি ও লোকজ চিকিৎসালয় এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। মসলা হিসেবেও রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। যা ৫ফোড়নের একটি বিশেষ উপাদান। এবং তেল উৎপাদন হয় কালো জিরার বীজ থেকে।

কালোজিরাতে থাকা বিভিন্ন উপাদান সমূহ

কালোজিরাতে ফসফরাস, লৌহ ও ফসফেট রয়েছে অনেক, তাছাড়াও ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধক ক্যারোটিন, এছাড়াও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান। অম্ল রোগের প্রতিষেধক হিসাবে কালোজিরা ব্যবহার করা হয়।

কালজিরা খাওয়ার নিয়ম

কালোজিরা মূলত দুইভাবে খাওয়া যাবে এমনিতেই কাঁচা চিবিয়ে এবং অন্য কোন খাবারের সাথে। আবার অনেকে পুদিনা পাতা, তুলসী পাতা, মধু, রসুন, হলুদ এসবের সাথে সেবন করে। তাছাড়া পানের সাথেও সেবন করা যায়, তবে নিয়ম মেনে খেতে হবে। বাজারে কালোজিরা তেলও পাওয়া যায় যা আপনি সেবন করতে পারেন। তবে প্রতিদিন নিয়ম মেনে ১ থেকে ২ চা চামচ কালোজিরা খেলে আপনি অনেকটা উপকৃত হবেন।

কালজিরা খাওয়ার উপকারিতা

সাধারণত আমরা যাকে কালোজিরা নামে চিনি তার আরো অনেকগুলো নাম রয়েছে যেমন নিজেলা, ফিনেল ফ্লাওয়ার, রোমান ধানে, কালো কেওড়া, রোমান করিয়েন্ডার তবে যে নামে ডাকা হোক না কেন এটি স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী উপাদান। মুসলমানদের ধর্মীয় শাস্ত্রে বলা আছে যে মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের ঔষধ কালোজিরা। যেমন সর্দি, জ্বর, কাশি, অরুচি, গলা ব্যথা, শরীর ব্যথা, দাঁত ব্যথা,বাতের ব্যথা, মাথা ব্যথা, পেটের ব্যথা সকল ব্যথা নিরাময় করার জন্য কালোজিরা অত্যন্ত ভালো কাজ করে।
মানবদেহের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া নিধন থেকে শুরু কোষ ও কলার বৃদ্ধিতে অনেক ভূমিকা রাখে কালোজিরা। শুধু স্বাস্থ্যের জন্য নয় চুল ও ত্বকের জন্য এটি খুব উপকারী উপাদান। তাছাড়া রান্নার কাজেও এটির চাহিদা অনেক বেশি থাকে। মানবদেহের প্রায় সব রকম রোগের সু-চিকিৎসা দেওয়ার জন্য কালোজিরা ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
  • স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করা
১ বা ২ চা চামচ পুদিনা পাতার রস বা এক কাপ রং চায়ের সাথে ১ চা চামচ কালোজিরা তেল মিশিয়ে প্রতিদিন তিনবার করে নিয়মিত সেবন করুন তাতে করে দুশ্চিন্তা দূর হবে। তাছাড়াও কালোজিরা সেবনের ফলে মেধার বিকাশ ঘটে দ্বিগুণ হারে, কেননা কালোজিরা নিজেই একটি অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। তার ফলে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করার মাধ্যমে স্মরণ শক্তি বেড়ে যায়।

আমাদের দেহের রক্তের সঞ্চালন বাড়ানোর জন্য কালোজিরা সেবন করা আবশ্যক যার ফলে মস্তিষ্কের সাথে রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে এবং মানুষের স্মৃতিশক্তি বেড়ে যায়।
  • মাথা ব্যাথা নিরাময় করা
২ বা ৩ চা চামচ কালোজিরার তেল সমগ্র মাথায় ভালোভাবে লাগাতে হবে, এবং ১ চা চামচ কালোজিরা তেল ২ চা চামচ মধু সহ প্রতিদিন তিনবার করে সেবন করতে হবে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ। তবে মাথাব্যথা ভালো হয়ে যাবে।
  • শরীরের যে কোনো ব্যাথা নিরাময় করা
ব্যাথা প্রাপ্ত স্থান ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে এবং সেখানে কালোজিরা তেল মালিশ করতে হবে। তার পাশাপাশি ১ চা চামচ হলুদের রসের সাথে সমপরিমাণ কালোজিরা তেল সমপরিমাণ মধু নিয়ে মিশ্রিতভাবে দিনে কমপক্ষে ৩ বার সেবন হের যেকোনো ব্যথা দূর হব।
  • চর্ম রোগ নিরাময় করা
রোগ প্রাপ্ত স্থান ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে এবং সেখানে কালোজিরা তেল মালিশ করতে হবে। তার পাশাপাশি ১ চা চামচ হলুদের রসের সাথে সমপরিমাণ কালোজিরা তেল সমপরিমাণ মধু নিয়ে মিশ্রিতভাবে দিনে কমপক্ষে ৩ বার সেবন হের যেকোনো ব্যথা দূর হব।
  • হার্টের সমস্যা নিরাময় করা
কালোজিরার তেল খুব ভালোভাবে বুকে নিয়মিত মালিশ করতে হবে। তার পাশাপাশি ১ কাপ দুধের সাথে ১ চা চামচ কালোজিরা তেল প্রতিদিন দুইবার করে ৪ থেকে ৫ সপ্তাহ সেবন করতে হবে। তবে হার্টের সমস্যা দূর হবে।
  • ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখা
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার পর রসুনের দুটি কোষ চিবিয়ে খেতে হবে। এবং পুরো শরীরে কালোজিরার তেল মালিশ করতে হবে। তারপর সূর্যের তাপে কমপক্ষে ৩০ মিনিট থেকে 40 মিনিট পর্যন্ত অবস্থান করতে হবে। তার পাশাপাশি ১ চা চামচ কালোজিরা তেল সমপরিমাণ মধু খেতে হবে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ৩ দিন।
  • হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট রোগ নিরাময় করা
শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগের জন্য কালোজিরা অনেক উপকারী। প্রতিদিন খাবার তালিকায় কালোজিরার ভর্তা রাখুন যাদের হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট আছে। তাছাড়া ১ চা চামচ কালোজিরা তেল ১ কাপ দুধের সাথে দৈনিক তিনবার করে সেবন করুন, তাতে হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট দূর হবে।
  • ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ করা
ডায়াবেটিক রোগ নিয়ন্ত্রণ করার খুব ভালো কাজ করে কালোজিরা। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার পর খালি পেটে এক গ্লাস পানির সাথে ১ চিমটি সমপরিমাণ কালোজিরা সেবন করলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তাছাড়া চায়ের সঙ্গে কালোজিরা তেল, গরম ভাতের সাথে কালোজিরার তেল মিশিয়ে দিনে ২ বার সেবন করুন তবে আপনার ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
  • যৌন শক্তি বৃদ্ধি করা
নিয়মিতভাবে কালোজিরা সেবন করলে নারী পুরুষ দুইজনেরই যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। নিয়মিত কালোজিরা খাবারের সাথে খেলে পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এক চা চামচ মাখন বা এক চা চামচ জাইতুন তেল তার সাথে সমপরিমাণ কালোজিরার তেল ও মধু দিনে কমপক্ষে ৩ বার সেবন করতে হবে টানা ৪ থেকে ৫ সপ্তাহ। তবে পুরনো কোন কালোজিরা তেল ব্যবহার করা যাবে না যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
  • ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে
আমরা সব সময় ত্বকের যত্ন বেশি করি কেননা মানুষের সৌন্দর্য ফুটে ওঠে তার ত্বকের মাধ্যমে। আমাদের ত্বকের গঠন উন্নতি ও ত্বকের প্রভাবিত করার জন্য কালোজিরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। এতে লেনোলেনিক ও লেনলিক নামের অ্যাসেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা পরিবেশের স্ট্রেস ও প্রখরতা থেকে ত্বককে রক্ষা করে ত্বক সুন্দর ও ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে।
  • গ্যাস্ট্রিক বা আমাশয় নিরাময় করা
১ চা চামচ কালোজিরা তেল সমপরিমাণ মধু নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে দিনে ৩ বার সেবন করতে হবে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ।
  • হজমের সমস্যা নিরাময় করতে কালোজিরার ব্যবহার
হজমের সমস্যা নিরাময় করার জন্য ২ চা চামচ কালোজিরা ভাল করে বেটে নিয়ে এক গ্লাস পানির সাথে খেতে হবে প্রতিদিন তিনবার করে, তবে হজম শক্তি বেড়ে যাবে। পাশাপাশি পেট ফাঁপা ভাবও অনেকটা কমে আসবে।
  • চোখের ব্যাথা নিরাময় করা
রাতে ঘুমাবার আগে ২ চোখের ভুরুতে কালোজিরা তেল সুন্দরভাবে মালিশ করতে হবে। তার পাশাপাশি গাজরের রসের সাথে কালোজিরার তেল সেবন করতে হবে কমপক্ষে ১ মাস, নিয়মিত সেবন করলে চোখের ব্যাথা দূর করা সম্ভব। তা না হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এছাড়াও মানব দেহের অনেক উপকার হয় কালোজিরা তেল মালিশ করলে ও কালোজিরা খেলে। তাই আপনার সমস্যা অনুযায়ী কালোজিরার তেল মালিশ করুন ও সেবন করুন।

কালোজিরা খাওয়ার অপকারিতা

পৃথিবীতে যত রকমের জিনিস আছে তার প্রত্যেকটারই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কেননা কোন জিনিস যদি আপনি চাহিদার চেয়ে বেশি সেবন করেন তাহলে উপকারের চেয়ে ক্ষতি হবে বেশি। সে কারণে আপনার সমস্যা যেটা তার সাথে মিল রেখে যতটুকু কালোজিরা সেবন করা প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই করবেন তবে আপনার দেহের জন্য সেটা কল্যাণকর হবে, অন্যথায় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে দেহের ক্ষতি হতে পারে। তাই নিয়ম মেনে প্রতিদিন সময়মতো রোগ অনুযায়ী সেবন করা প্রয়োজন।

কালোজিরা সংরক্ষণ করে রাখার সঠিক নিয়ম

আমাদের প্রয়োজনীয় প্রত্যেকটা জিনিসই আমরা সংরক্ষণ করে রাখি, কেননা তা ছাড়া সেটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তেমনি কালোজিরাও সংরক্ষণ করে রাখতে হবে তাছাড়া বাইরে ধুলোবালি বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া কালোজিরার সাথে মিশে যেতে পারে যেটা সেবন করা স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব ক্ষতিকর। তাই আমাদের সঠিক উপায় কালোজিরা সংরক্ষণ করে রাখতে হবে প্রথমে আপনাকে যেটা করতে হবে তা হলো কোন প্রকার ভিজে বা ময়লাযুক্ত জায়গায় কালোজিরা রাখা যাবে না।
কালোজিরা রাখতে হবে সুন্দর পরিষ্কার ও শুকনো জায়গায়। প্লাস্টিকের বা কাঁচের জারাতে রাখলে সবথেকে ভালো হয়। তবে তার মধ্যে যেন পানি না ঢুকে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে প্রয়োজনে রোদে দিয়ে শুকাতে হবে ভালো করে। আবার পলিথিন ব্যাগেও কালোজিরা সংরক্ষণ করে রাখা সম্ভব তবে বাইরের হাওয়া বাতাস যেন না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

কেননা বাহিরের হাওয়া কালোজিরাতে লাগলে তা নষ্ট হয়ে যাবে খুব অল্প সময়ে। সেজন্য পলিথিন ব্যাগে কালোজিরা রাখার পর সেটা আলমারি, প্লাস্টিকের বক্স, অথবা রান্না ঘরের সেফে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। আর বিশেষ করে বেশি দিন ধরে সংরক্ষণ করে রাখা কালোজিরা খাওয়ার আগে রোদে দিয়ে হালকা একটু শুকিয়ে নিলে ভালো হয়।

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক, আর.বি.আর ব্লগের এই আর্টিকেলে কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও কালোজিরাতে থাকা বিভিন্ন উপাদান সমূহ সহ কালোজিরা সকল তথ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। যেকোন শিক্ষনীয় বিষয় জানতে আর.বি.আর ব্লগের ফলো দিয়ে রাখুন। আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url