খেজুর খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা জানুন
কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুনআসসালামু আলাইকুম, সুপ্রিয় পাঠক খেজুর খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা জানুন এবং খেজুরের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে খেজুর খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা জানুন ও খেজুরের বৈশিষ্ট্য সহ সকল তথ্য জানানোর চেষ্টা করেছি। সেজন্য খেজুর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ রইল।
সূচিপত্র: খেজুর খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা জানুন
উপস্থাপনা
আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে জানানোর চেষ্টা করেছি খেজুর খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা জানুন, খেজুরের বৈশিষ্ট্য, খেজুরের ইতিহাস, খেজুর চাষের পদ্ধতি ও খেজুর বেশি খাওয়ার অপকারিতা। সেজন্য খেজুর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে আপনি অবশ্যই আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
খেজুর (ইংরেজি: Date Palm)
খেজুরের বৈজ্ঞানিক নাম হলো (Phoenix dactylifera)। খেজুর শাখা বিহীন তাল জাতীয় এক ধরনের বৃক্ষ। মানব সভ্যতার ইতিহাসে সু-মিষ্টি ফল হিসাবে খেজুরের গ্রহণযোগ্যতা আছে অনেক পূর্বে থেকেই। খেজুর গাছ মূলত মরু এলাকায় অনেক ভালো জন্মে। খেজুর রূপে আখ্যায়িত করা হয় খেজুর গাছের ফলকে।
১৭ থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতা হয়ে থাকে মাঝারি আকারের খেজুর গাছের। পাখির পালকের আকৃতি বিশিষ্ট হয় খেজুর গাছের পাতা। ৩ থেকে ৫ মিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্য হয় খেজুর গাছের পাতার। পাতায় দেখা যায় পত্র দন্ডের। একটি মাত্র শাখা থেকে এক বা একাধিক কাণ্ড রয়েছে অনেক বৃক্ষের।
খেজুরের ইতিহাস
অনেক আগে থেকেই মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় জনসাধারণের কাছে খেজুর অত্যন্ত প্রিয় খাবার হিসেবে বিবেচিত। সর্বপ্রথম খেজুর চাষ শুরু করা হয় পারস্য উপসাগরের তীরবর্তী দেশগুলোতে। খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ বছর পূর্বে খেজুর গাছের গুনাগুন সম্পর্কে অবগত হয় মিশরের অধিবাসীরা।
প্রাচীন কাল থেকে মিশরীয়রা খেজুরের ফল থেকে মদ জাতীয় পানি তৈরি করত এবং তা পান করত। পরবর্তী সময়ে আরবের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় খেজুরের চাষ শুরু হয়। আবার পশ্চিম পাকিস্তানের মেরগড় এলাকায় খেজুরের চাষাবাদ শুরু হয় প্রস্তর যুগে।
এবং পর্যায়ক্রমে উপমহাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বাণিজ্যিকভাবে খেজুর চাষ করা শুরু হয়েছিল। বর্তমান সময়ে আরব আমিরাত সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো খেজুর উৎপাদনে এগিয়ে সারা বিশ্বে।
খেজুরের বৈশিষ্ট্য
মূলত ডিম্বাকৃতির হয়ে থাকে খেজুর। খেজুরের দৈর্ঘ্য ৩-৭ সে.মি. এবং ২-৩ সে.মি. ব্যাসার্ধ। খেজুরের প্রজাতির উপর নির্ভর করে কাঁচা খেজুর ফলের রং লাল অথবা উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের হয়। খেজুরের বীজ মূলত একবীজপত্রী উদ্ভিদ হওয়ার কারণে এর বীজে ২-২.৫ সে.মি. লম্বা হয় এবং ৬-৮ সে.মি. পুরুত্বের হয়। বর্তমান সময়ে ৩ টি জাতের খেজুর বেশি চাষা হয়ে থাকে।
সেগুলো হলোঃ
- নরম
- অর্ধ-শুষ্ক
- শুকনো
বর্তমান সময়ে ৪ টি উপায়ে খেজুর পাকানো হয়ে থাকে।
সেগুলো হলোঃ
- কিমরি (কাঁচা)
- খলাল ( পূর্ণাঙ্গ, ক্রাঞ্চি)
- রুতাব (পাকা, নরম)
- তমর (সূর্যে পাকানো)
খেজুর গাছে ফল উৎপাদন করার জন্য সাধারণত ৪ থেকে ৮ বছর সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনকারী খেজুর গাছে ফল আসতে সময় একটু বেশি লাগে। পূর্ণবয়স্ক খেজুর গাছে প্রতি মৌসুমে ৮০ থেকে ১২০ কেজি বা কিলোগ্রাম ফল পাওয়া যায়।
যেসব ফল বাজারজাত করা হয় সেইসব ফলের শাখাকে পাতলা হতে হয়। তবে খেজুরের ভালো ফলন পেতে হলে অবশ্যই গাছের পরিচর্যা করতে হবে এবং খেজুর গাছে পাখির উপদ্রব কমাতে হবে। তবে খেজুর গাছ থেকে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব।
খেজুর খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা জানুন
খেজুর অত্যন্ত সুস্বাদু এবং মিষ্টি একটা ফল। যা বাংলাদেশ সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভর একটি ফল হিসেবে পরিচিত। কেননা বাংলাদেশের কোথাও বাণিজ্যিকভাবে খেজুর চাষ করা হয় না। তবে বাইরের দেশের ফল হলেও বাংলাদেশের সর্বত্র খেজুরের দেখা পাওয়া যায়।
তবে জাত ভেদে খেজুরের অনেক পার্থক্য রয়েছে। এবং মানুষ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পেতে খেজুর সেবন করে থাকে। তার ধারাবাহিকতায় খেজুর খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
- ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে
মানুষের ত্বকের উপরেই বয়সের ছাপ পড়ে। সে কারণে আপনি নিজের ত্বকের যত্ন নিতে নিয়মিত খেজুর কাজে লাগাতে পারেন। কেননা নিয়মিত খেজুর খাওয়ার ফলে ত্বকের শুষ্কতা দূর হয়। খেজুর অনেক সিদ্ধহস্ত ত্বকের বলি রেখা নিয়ন্ত্রণে রাখতে। তাছাড়াও খেজুর খাওয়ার ফলে আপনার দেহের হরমোনের সমস্যা দূর হয় ও ত্বকের ফ্যাকাসে ভাব হ্রাস পায়।
খেজুরে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল ও ভিটামিন থাকার কারণে আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বিগুণ বাড়িয়ে তোলে। তাই দেহের সৌন্দর্য ধরে রাখতে আপনি নিয়মিত খেজুর খেতে পারেন। তবে সেটা পরিমাণের চেয়ে বেশি নয়।
- হাড় মজবুত করতে
হাড় গঠন করতে সবচেয়ে বেশি সহায়ক হলো ক্যালসিয়াম। যা খেজুরে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। তাই নিয়মিত খেজুর খাওয়ার ফলে আপনার দেহের হাড় পাশাপাশি মাড়ির স্বাস্থ্য অনেক ভালো থাকবে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে
মানুষের শরীরে আয়রনের ঘাটতির কারণে ডায়াবেটিস সমস্যা দেখা দেয়। আর সেই আয়রনের ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করে হলো খেজুর। পাশাপাশি চিনির বিকল্প হিসেবে কাজ করে হলো খেজুরের মিষ্টিতা। যার ফলে আপনি খেজুর খেলে ডায়াবেটিস সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন খুব সহজে।
- খাদ্য পরিপাকে
মানুষের হজম শক্তি কমতে থাকে ৩০ সের কোঠায়। তাই সেই সময় মানুষকে নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে হজম শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য। কেননা খাবারের কৃমি ও ক্ষতিকারক পরজীবী প্রতিরোধে বেশ সহায়ক খেজুর। খেজুর প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে যা খাদ্য পরিপাকে নিয়মিত কাজ করে এবং দেহের কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করে।
- স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে
মানুষের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটা বেড়ে যায়। আর সেই ঝুঁকি কমাতে আপনি নিয়মিত খেজুর খেতে পারেন। খেজুরের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে বেশ কার্যকরী। আবার নিয়মিত খেজুর খাওয়ার ফলে শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমানোর পাশাপাশি ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে।
- পেশী মজবুত করতে
মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে পেশীতে নানা জটিলতা দেখা যায়। আর সেই পেশীর জটিলতা দূর করতে কাজ করে হলো প্রোটিন। আর খেজুর হলো প্রোটিনযুক্ত ফল। সেজন্য মানুষের পেশী ভালো রাখার জন্য এবং শরীরের সমস্যা দূর করার জন্য খেজুর অনেক প্রোটিন সরবরাহ করে থাকে শরীরে।
- দৃষ্টিশক্তি ধরে রাখতে
খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন। যা মানুষের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যক। খেজুর কে বলা হয় ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-সির পাওয়ার হাইস। যা মানুষের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। বিশেষ করে রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করার জন্য খেজুর অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে। সেজন্য যাদের চোখের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত খেজুর খেতে পারেন।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত খেজুর খান
যাদের গলা ব্যথা, জ্বর, সর্দি এবং ঠান্ডা লাগে খুব অল্পতেই তাদের জন্য খেজুর অত্যন্ত উপকারী ফল। খেজুর মূলত অ্যালকোহল জনিত বিষক্রিয়ায় অত্যন্ত উপকারী ফল। বিশেষ করে ভেজানো খেজুর খেলে খুব দ্রুত বিষক্রিয়ায় কাজ করে। তাছাড়া শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যেকোনো বয়সের মানুষ নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।
- কর্ম ক্ষমতা বাড়াতে খেজুর খান
খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি। যা শরীরের দ্রুত শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। অনেক সময় বয়স বৃদ্ধির কারণে ঝিমুনি ভাব দেখা দেয়। তারা নিয়মিত খেজুর খাওয়ার ফলে দেহের ক্লান্তি ভাব খুব সহজে দূর হয়।
- স্নায়ুতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়াতে খেজুর খান
খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকার কারণে এটি মানুষের মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনার গতি বৃদ্ধি করে তার পাশাপাশি স্নায়ুতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে থাকে। বিশেষ করে অল্প বয়স্ক ছেলে-মেয়েরা নিয়মিত খেজুর খাওয়ার ফলে তাদের স্মৃতিশক্তি অনেক মজবুত থাকে। তাই নিজের স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন।
খেজুর বেশি খাওয়ার অপকারিতা
প্রতিটা খাদ্যের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিদ্যমান। কোন খাদ্য আপনি যদি পরিমাণের চেয়ে বেশি গ্রহণ করেন তবে আপনার উপকারের চাইতে ক্ষতি অনেক বেশি হতে পারে। সেজন্যই যেকোনো সমস্যার হাত থেকে নিস্তার পেতে হলে অবশ্যই পরিমাণমতো খেজুর খেতে হবে। তা ছাড়া কোন সুফল পাওয়া যাবে না। পাশাপাশি নিয়মমাফিক খেজুর খাওয়া প্রয়োজন।
আপনি যদি নিয়মিত খেজুর না খান তবে আপনার দেহের কোন উপকারে আসবে না এই ফল। সেজন্য সঠিক উপকার পাওয়ার জন্য নিয়মিত এবং পরিমাণ মতো খেজুর খান। তবেই খুব দ্রুত সমস্যা থেকে নিস্তার পেতে পারেন।
শেষ কথা
আমরা আজকের এই আর্টিকেলে খেজুর খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা জানুন পাশাপাশি খেজুরের বৈশিষ্ট্য সহ খেজুরের সকল তথ্য জানানোর চেষ্টা করেছি। আমাদের আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে এটি অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। যেকোনো শিক্ষনীয় বিষয় জানতে আমাদের এই ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url