লেবু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

ছোলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুনআসসালামু আলাইকুম, সুপ্রিয় পাঠক লেবু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন ও লেবুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
লেবু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
কেননা এই আর্টিকেলে লেবুর বৈচিত্র, লেবুর বৈশিষ্ট্য ও লেবুর কি কি গুনাগুন রয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। পাশাপাশি লেবু খাওয়ার ফলে আপনি কোন কোন সমস্যা থেকে নিস্তার পাবেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাই লেবু সম্পর্কিত সকল তথ্য জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন।
সূচিপত্র: লেবু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

লেবু

রুটেসি পরিবারের চিরসবুজ সপুষ্পক উদ্ভিদ হলো লেবু। লেবু সাধারণত দক্ষিণ এশিয়ার উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি স্থানীয় গাছ। লেবুর রসের ব্যবহার অনেক আগে থেকেই করে আসছে সমগ্র বিশ্বের মানুষ। বিশেষ করে রান্নার কাজে বেশি ব্যবহার করা হয় উপবৃত্তকার হলুদ ফলটি। তাছাড়াও বিভিন্ন মানুষ নানান কাজে লেবু ব্যবহার করে থাকে। কোন কিছু পরিষ্কার করতে লেবুর কোন বিকল্প নেই।
লেবুর রস টক হওয়ার কারণ হলো লেবুতে প্রচুর পরিমাণে সাইট্রিক এসিড রয়েছে। লেবুর রস টক স্বাদযুক্ত হওয়ার কারণে লেবু শরবত হিসেবে বেশি ব্যবহার করা হয়। নোয়াখালী অঞ্চলে লেবুকে কাগজি নামে ডাকা হয় আবার চট্টগ্রাম অঞ্চলে হজি হিসাবে আখ্যায়িত করা হয় লেবুকে।

লেবুর বৈশিষ্ট্য

বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন বৈচিত্রের লেবু রয়েছে। স্থান ভেদে প্রতিটা লেবুর গঠন প্রক্রিয়া আলাদা কেননা জলবায়ুগত কারণে লেবুর বৈচিত্র আলাদা হয়ে থাকে। কয়েকটা লেবুর বৈচিত্র্য নিয়ে আলোচনা করা হলো বনি ব্রাই, ইউরেকা, লিসবন লেবু, ফেমিনেলো সেন্ট টেরেসা ও ইয়েন বেন।
  • বনি ব্রাই
আমেরিকার সান দিয়াগো অঞ্চলে বেশি উৎপাদন হয়ে থাকে বনি ব্রাই জাতের লেবু। এ জাতের লেবু সাধারণত পাতলা খোসাযুক্ত ও বিজবিহীন এবং আবদ্ধ-মসৃণ হয়ে থাকে।
  • ইউরেকা
সুপার মার্কেটে সবচাইতে প্রচলিত লেবু হলো ইউরেকা জাতের লেবু। কারণ ইউরেকা জাতের লেবু সারা বছর প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয়ে থাকে যার কারণে সব সময় এটা ব্যবহারের জন্য পাওয়া যায়। ইউরিকা জাতের লেবু সারা বছর পাওয়া যায় বলে একে ফোর সিজনস নামেও ডাকা হয়। বৈচিত্র্যময় সবুজ এবং হলুদ রঙের খোসার গোলাপি আঁশের লেবু বাসাতেও টবে রেখে উৎপাদন করা সম্ভব।
  • লিসবন
ইউরেকা জাতের লেবুতে সবচাইতে বেশি রস পাওয়া যায় কেননা ইউরেকা জাতের লেবুর চাইতে লিসবন জাতের লেবুর খোসা অনেক পাতলা এবং নিজ বোন জাতের লেবুতে কোন প্রকার বীজ থাকে না। তবে লিসবন জাতের লেবু সারা বছর সুপার মার্কেটে দেখা পাওয়া যায় না। মৌসুম ভেদে উৎপাদিত হয়ে থাকে লিসবন জাতের লেবু।
  • ফেমিনেলো সেন্ট টেরেসা
এই জাতের লেবু সাধারণত ইতালিতে উৎপাদিত একটি জাত। ঐতিহ্যগতভাবে এই জাতের লেবু দিয়ে লিমনসেলো তৈরি করা হয়ে থাকে কারণ এই জাতের লেবুর খোসার উপরের অংশ তেলে ভরপুর।
  • ইয়েন বেন
একটি অস্ট্রেলিয়ান জাতের লেবু হলো ইয়েন বেন।

লেবুর ব্যবহার

বর্তমান সময়ে অনেক মানুষ বিভিন্ন কাজে লেবুর ব্যবহার করে থাকে। লেবুর প্রত্যেকটা অংশ ব্যবহার করার উপযোগী। লেবুর রস খাওয়া যায়, লেবুর খোসা যে কোন ব্যবহারকৃত জিনিস পরিষ্কার করতে কাজে লাগে, লেবু গাছের পাতা দিয়ে সুস্বাদু খাবার রান্না করা হয় ও লেবুর তেল ঔষধি কাজে ব্যবহার করা হয়।
  • লেবুর রসের ব্যবহার
লেবুর রস সাধারণত শরবত, কোমল পানীয় ও ককটেল তৈরিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। লেবুর রসে থাকা এসিড দিয়ে মাছ মেরিনেড করার কাজ হয়ে থাকে। কারণ তা মাছের অ্যামাইনো যৌগগুলো অনুযায়ী অ্যামোনিয়াম লবণে রূপান্তর করে ফেলে। আবার মাংসের শক্ত কোলাজন ফাইবার কে আংশিক হাইড্রোলাইজ করার জন্য লেবুর রসের ব্যবহার করা হয়।

বর্তমান সময়ে বিশেষত শ্রোভ মঙ্গলবারে প্যানকেকে প্রায়শই লেবুর রস ব্যবহার করা হয়ে থাকে যুক্তরাজ্যে। লেবুর রস কিছু খাবার দিয়ে রাখলে সেই খাবার স্বল্প মেয়াদী প্রিজারভেটিভ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কারণ লেবুর রস সেই খাবারের এসিড এনজাইমের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে ফেলে।
  • লেবুর খোসার ব্যবহার
মরক্কোতে লেবু সাধারণত লবণের পিপায় সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। কারণ লবণ খোসা ভেদ করে সেটাকে নরম করে রাখে এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থায়ী করে রাখে। এবং সে সংরক্ষিত লেবু বিভিন্ন খাবারের সাথে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে ইতালিয়ান, সিসিলিয়ান, ফরাসি এবং গ্রিক খাবার গুলোতে সংরক্ষিত লেবু বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আবার লেবুর খোসা দিয়ে পেকটিন তৈরি করা হয়। যা পলিস্যাকারাইড হিসাবে জেলিং এজেন্ট এবং স্টাবিলাইজার হিসেবে খাদ্যে ব্যবহার করা হয়।
  • লেবু গাছের পাতার ব্যবহার
লেবু গাছের পাতা বিশেষ করে সামুদ্রিক খাবার ও যেকোনো মাংসে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাছাড়াও লেবু গাছের পাতা দিয়ে চা তৈরি করে খাওয়া যায়।
  • লেবুর তেলের ব্যবহার
লেবুর তেল বের করা হয় লেবুর খোসা থেকে। লেবু মেশিনে দিয়ে কোষগুলোকে ভাঙার পর তেল বের করে আনতে পানির স্প্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পানি ও তেলের মিশ্রণটি আলাদা করার জন্য সেন্টিফিউগেশনের মাধ্যমে ফিল্টার করা হয়ে থাকে।

লেবু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার পর এক গ্লাস লেবু পানি শরীরের জন্য অনেক উপকারী। কেননা শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে সেই পানি অনেক কার্যকর ভূমিকা রাখে। তাছাড়াও লেবু পানি আরো অনেক গুণ রয়েছে। লেবু পানি খাওয়ার ফলে আপনি যেসব উপকার পাবেন তা হলোঃ
  • বদহজম থেকে মুক্তি
দেহের হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখার জন্য প্রতিদিন সকালে নিয়মিত লেবু পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন। নিয়মিত লেবু পানি খাওয়ার ফলে বদহজম বা অম্বলের সমস্যা খুব দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে। পাশাপাশি লেবু পানি খাওয়ার ফলে গ্যাস্টিকের সমস্যার সৃষ্টি হয় না।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো
দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত লেবু পানি খান। কেননা লেবুর রসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি থাকায় দেহে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি পায়। তার সাথে লেবুর রসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রন রয়েছে। যা দেহের রোগ নির্মূল করতে সাহায্য করে এবং দেহকে শক্তিশালী ও স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে।
  • ত্বকের যত্নে
ত্বক সুন্দর মসৃণ রাখার জন্য লেবু পানি অনেক উপকারী উপাদান। কেননা লেবুতে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ত্বকের চামড়া কুঁচকে যাওয়া প্রতিরোধ করে ত্বক সতেজ ও সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। যাদের ত্বকে ব্রণ ও কালো দাগ রয়েছে তারা সপ্তাহে ২ দিন করে লেবুর খোসা দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করুন। তাতে করে ব্রণের দাগ সহ ত্বকের যেকোনো দাগ দূর হয়ে যাবে।
  • দাঁত ভালো রাখতে
যাদের দাঁতের ব্যথা রয়েছে তারা নিয়মিত এক গ্লাস পানির সাথে একটু লবণ ও লেবুর রস মিশিয়ে নিয়মিত দাঁতে লাগালে খুব সহজে ব্যথা নির্মূল করা সম্ভব হবে। কারণ লেবুতে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিইনফ্লেমারির বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা দাঁতের ব্যথা নির্মূল করতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
  • হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে
গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ শাকসবজি ও ফলমূল খেলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে আসে। আর সে কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে লেবু খাওয়ার অভ্যাস করুন কারণ একটি লেবুতে প্রায় ৩০ মিলিগ্রামের বেশি ভিটামিন সি রয়েছে। তার পাশাপাশি লেবুতে থাকা আঁশ হার্টের সুস্থ রাখার জন্য অত্যন্ত ভালো ভূমিকা রাখে।

লেবু বেশি খাওয়ার অপকারিতা

প্রতিটা খাদ্যের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া বিদ্যমান। তার জন্য আপনি যে খাবারই গ্রহণ করুন না কেন তা অবশ্যই পরিমাণ মতো খেতে হবে। তাছাড়া দেহের উপকারের চাইতে ক্ষতি বেশি হতে পারে। সেজন্য খাদ্যের সঠিক উপকার পেতে হলে পরিমাণ মতো খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি সঠিক গুনাগুন পেতে নিয়মিত সেই খাদ্য গ্রহণ করা অতি জরুরী। অন্যথায় সেই খাদ্য থেকে কখনোই সুফল পাওয়া যাবে না। সেকারণে নিজের দেহ কি ঠিক রাখার জন্য পরিমাণ মতো ও নিয়মিত লেবু খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক, আর.বি.আর ব্লগের এই আর্টিকেলে লেবু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। যেকোনো বিষয়ের সঠিক তথ্য সবার আগে জানতে আর.বি.আর ব্লগের গুগল নিউজে ফলো দিয়ে রাখুন। আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url