পেয়ারা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা

খেজুর খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা জানুনআসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক পেয়ারা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা এবং পেয়ারা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে আমাদেরই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
কেননা আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাকে জানাতে চলেছি পেয়ারা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা এবং পেয়ারা চাষ পদ্ধতি সহ পেয়ারার সকল তথ্য। পাশাপাশি পেয়ারা খাওয়ার ফলে আপনি কোন কোন সমস্যার সমাধান পাবেন সেই সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য।
সূচিপত্রঃ পেয়ারা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা

পেয়ারা (বৈজ্ঞানিক নাম: Psidium guajava)

পেয়ারা সাধারণত Myrteae পরিবারের অন্তর্গত সদস্য। সবুজ রঙের বেরি জাতীয় ফল হলো পেয়ারা। তবে পেয়ারার আরো অনেক রং রয়েছে। বিশেষ করে লাল রঙের পেয়ারা কে রেড আপেলও বলা হয়। বর্তমান সময়ে পেয়ারার প্রায় ১০০ টির ও বেশি প্রজাতি রয়েছে।

বর্তমান সময়ে মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও মেক্সিকোতে পেয়ারা বেশি উৎপাদন হয়ে থাকে। অনুমান করা হয় প্রায় ১৭শ শতাব্দীর দিকে পেয়ারার উদ্ভব হয়েছিল। পেয়ারা অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল। বিশেষ করে একটা পেয়ারাতে কমলার চেয়ে ৪ গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে।

পেয়ারাতে থাকা পুষ্টি উপাদান

পেয়ারা অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি ফল। পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ফোলেট, পটাশিয়াম,আশ ও ক্যারোটিনয়েডস রয়েছে। একশ গ্রাম পেয়ার দুইশ মি.গ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে। বিশেষ করে পেয়ারার খোসায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে যা অন্য কোন ফল থেকে পাওয়া সম্ভব নয়। পেয়ারা ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে লৌহ উপাদান রয়েছে। পুষ্টি মানের ক্ষেত্রে পেয়ারার পুষ্টি মূল্যমান ৪২১ পয়েন্ট। যা অন্যান্য ফলের চাইতে দ্বিগুণ।
মানুষের দেহের রোগ প্রতিরোধে পেয়ারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কেননা পেয়ারা খাওয়ার ফলে শরীরে দুর্বলতা, হাড়ের ক্যালসিয়াম বৃদ্ধি ও ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। তাছাড়াও পেয়ারা পাতার রস ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি সংক্রমণ, প্রদাহ, যেকোনো ধরনের ব্যথা, সর্দি-জ্বর সহ দেহের সমস্যা নির্মূল করতে সাহায্য করে। তাছাড়াও আমাশয় দূর করতে পেয়ারা পাতার বিকল্প কোন ওষুধ নেই।

পেয়ারা চাষ পদ্ধতি

দ্বিবীজপত্রী বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ হলো পেয়ারা। পেয়ারার পাতাগুলোর প্রান্ত অখন্ড অবস্থায় থাকে। পেয়ারার ফুলে ৫ টি দল ও ৫ টি বৃত্যংশ দেখা যায়। প্যারা ফল অত্যন্ত মিষ্টিস্বাদ পূর্ণ ও বীজপূর্ণ হয়ে থাকে। উন্নত জাতের পেয়ারায় বীজের পরিমাণ খুবই কম থাকে। উষ্ণ এবং শীত উভয় অঞ্চলেই পেয়ারা জন্মায়। অত্যন্ত কষ্ট সহীষ্ণ উদ্ভিদ হল পেয়ারা। অত্যন্ত বেশি খরা সহ্য করতে পারে পেয়ারা।

পেয়ারার চারা বিশেষ করে বর্ষার শুরুর দিকে আষাঢ় শ্রাবণ মাসে রোপন করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে বাংলাদেশে গুটিকলম করে পেয়ারার চারা উৎপাদন করা হয়। পেয়ারা চারা রোপনের জন্য রোদ যুক্ত জায়গা নির্বাচন করতে হবে। তারপরে ৩ হাত গর্ত করে ১৪-১৫ হাত পর পর ভালো জাতের চারা রোপন করতে হবে। ভালোভাবে যত্ন করলে ও সময় মত গাছের আগাছা পরিষ্কার করলে মাত্র ২ বছরের মধ্যে পেয়ারা গাছে ফুল আসার সম্ভাবনা থাকে।
উন্নত জাতের পেয়ারা গাছে বছরে ২ বার ফুল আসে ও ফল ধরে। বিশেষ করে শীতকালে পেয়ারার চাহিদা একটু বেশি থাকে। তাই সে সময় চাষীদের মুনাফা একটু বেশি আসে। পেয়ারা চাষ করতে গেলে যেটি মাথায় রাখতে হবে তা হল পেয়ারা গাছের ডগা শুকানো রোগ যাতে গাছে আক্রমণ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ রোগের ফলে গাছ ধীরে ধীরে মারা যায়।

এবং এক গাছের সমস্যা অন্য গাছে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমান সময়ে কৃষি কাজের জন্য অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতির উদ্ভাবন করা হয়েছে। আপনি যদি পেয়ারা চাষ করার জন্য সেই সব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে থাকেন তবে খুব অল্প সময়ে ভালো মুনাফা পেতে পারেন পেয়ারা চাষের মাধ্যমে। বাংলাদেশের বরেন্দ্র অঞ্চলে পেয়ারার চাষ অত্যন্ত বেশি হয়।

পেয়ারা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা

  • ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে
যেকোনো মানুষ সব সময় তার নিজের ত্বকের যত্ন নিতে পছন্দ করে। আপনি যদি নিজের ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে চান তাহলে নিয়মিত পেয়ারা ফল খান। কেননা পেয়ারা ফলে প্রচুর পরিমাণ আইরন ও ভিটামিনের সকল উপাদান বিদ্যমান থাকে। তার ফলে বাইরের ধুলোবালি কখনো আপনার ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট করতে পারবেনা।

কাঁচা পেয়ারা ও পেয়ারা পাতা খাওয়ার ফলে দেহের খারাপ কোলেস্টেরল নির্মূল হয়। যার জন্য ত্বকে কোন প্রকার জীবাণু বাসা বাঁধতে পারেনা। তাই পেয়ারা খাওয়ার ফলে দীর্ঘদিন ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখা সম্ভব।
  • বদহজম দূর করা
ফাইবার সমৃদ্ধ ফল হল পেয়ারা। আঁশযুক্ত খাবার দেহের মলমূত্র ত্যাগ করতে সাহায্য করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। বিশেষ করে পেয়ারা পাতার নির্যাস গুলো হজমের কাজ ঠিক রাতে সাহায্য করে থাকে। তাই বদহজম দূর করতে নিয়মিত পেয়ারা খান।
  • সর্দি-কাশি দূর করা
পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ভিটামিন সি রয়েছে যা ঠান্ডা জনিত সংক্রমনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে কাঁচা পেয়ারা রস অথবা পেয়ারার পাতা সর্দি ও কাশি দূর করতে সাহায্য করে থাকে। পাশাপাশি শ্বাসনালী, গলা ও ফুসফুসকে জীবাণুমুক্ত করতে সাহায্য করে।
  • অতিরিক্ত ওজন কমানো
মানুষের দেহের বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে ওজন কমাতে সাহায্য করে পেয়ারা ফল। পেয়ারা খাওয়ার ফলে শরীরে ভরাট স্ন্যাক তৈরি হয় যা খাবারে চাহিদা পূরণ করে। বিশেষ করে কাঁচা পেয়ারা তে চিনির পরিমাণ অনেক কম থাকে। তাই ওজন কমানোর জন্য কাঁচা পেয়ারা বেশি ভূমিকা রাখে।
  • মস্তিষ্ক ভালো রাখে
ভিটামিন বি-৩ এবং ভিটামিন বি-৬ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পেয়ারায়। যা নিয়াসিন ও পাইরিডস্কিন নামে পরিচিত। মানুষদের মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন এবং উন্নত করতে এবং স্নায়ুকে শিথিল রাখতে সাহায্য করে পেয়ারা। যার ফলে মাথাব্যথা ও অল্প বয়সে চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকে।
  • দাঁতের ব্যথা দূর করা
পেয়ারা পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং শক্তিশালী অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ক্ষমতা রয়েছে যা দাঁতের জীবাণুকে মেরে ফেলতে কাজ করে থাকে। পেয়ারার কচি পাতা খাওয়া দাঁত ব্যথা দূর করার সবচাইতে ঘরোয়া ভালো উপায়। পেয়ারা পাতার রস দাঁতের ব্যথা দূর করা, দাঁতের মাড়ি ফোলা ও মুখের মধ্যের ঘা ভালো করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
  • দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে
পেয়ারাতে ভিটামিন এ রয়েছে অনেক বেশি যার কারণে দৃষ্টিশক্তি সচল রাখতে পেয়ারা অত্যন্ত ভূমিকা রাখে। চোখের ছানি, ম্যাকুলার ও অবক্ষয়ের গতি কমাতে সাহায্য করে পেয়ারা। বিশেষ করে পুষ্টিহীনতার অভাবে যারা চোখে কম দেখে থাকেন তারা নিয়মিত পেয়ারা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে
পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা খাদ্যে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে থাকে। এবং মানুষের হার্ট সুস্থ রাখতে ভূমিকা রাখে। মানুষের দেহের সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের ভারসাম্য উন্নত করতে এবং উচ্চ রক্তচাপের মানুষের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে পেয়ারা ফল।
পেয়ারা খাওয়ার ফলে দেহের খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রা অনেক কমে যায় যার ফলে হৃদরোগের বিকাশে অবদান রাখে। পেয়ারা খাওয়ার ফলে দেহের কোষ্ঠকাঠিন্যের অবসাদ ঘটে এবং খাবার হজম করতে সাহায্য করে থাকে।
  • ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পেয়ারা খান
পেয়ারা খাওয়ার ফলে মানুষের দেহের প্রোটেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটা কমে আসে। পাশাপাশি স্তন ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে। পেয়ারা ফলে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপিন রয়েছে। যা মানুষের শরীরে উৎপন্ন ফ্রি জারডিকেল গুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে এবং ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি রোধ করতে বাধা প্রদান করে।
  • দেহের সৌন্দর্য ধরে রাখতে
মানুষের দেহের সৌন্দর্য ধরে রাখতে পানি খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর পেয়ারা ফলে প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে। তাই পেয়ারা খাওয়ার ফলে দেহের পানির অভাব দূর হয়। এবং মানুষের দেহের সৌন্দর্য দীর্ঘদিন যাবত অক্ষত থাকে। বয়স অনুযায়ী দেহের সৌন্দর্য কখনো বোঝা যায় না। তাই আপনি নিজের দেহের সৌন্দর্য ধরে রাখতে চাইলে নিয়মিত পেয়ারা ফল খেতে পারেন।

তাছাড়াও পেয়ারা ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, আয়রন, ফসফরাস ও আঁশ রয়েছে যা দেহের খাদ্য হজম থেকে শুরু করে সকল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। যার ফলে মানুষের দেহের সৌন্দর্য দীর্ঘদিন অটুট থাকে।

পেয়ারা বেশি খাওয়ার অপকারিতা

প্রতিটা খাদ্যের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই কোন খাদ্য অতিরিক্ত খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে কখনোই ভালো হবে না। সে কারণে নিজের সমস্যা অনুযায়ী সমাধান পেতে পরিমাণ মতো পেয়ারা খেতে হবে। তাছাড়া দেহের উপকারের চাইতে ক্ষতি বেশি হবে। প্রয়োজনে রেজিস্টার ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এবং সঠিক উপকার পেতে পরিমান মতো ও সময় মতো পেয়ারা ফল খান। তাহলে অবশ্যই আপনি আপনার সমস্যা থেকে খুব দ্রুত মুক্তি পেয়ে যাবেন।

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক, আজকের এই আর্টিকেলে আমরা পেয়ারা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা এবং পেয়ারা চাষ পদ্ধতি সহ পেয়ারার সকল তথ্য জানিয়েছি। আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে থাকলে একটি অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। যেকোন বিষয়ের তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url