আঙ্গুর খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা

খেজুর খাওয়ার ১০ টি উপকারিতাআসসালামু আলাইকুম, সুপ্রিয় পাঠক আঙ্গুর খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা ও আঙ্গুর চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
আঙ্গুর খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা
কেননা এই আর্টিকেলে আঙ্গুর খাওয়ার উপকারিতা ও আঙ্গুরের চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। পাশাপাশি আপনার দেহের কোন কোন সমস্যায় কত পরিমানে আঙ্গুর খেতে হবে তার বিস্তারিত বলা হয়েছে এই আর্টিকেলে। আঙ্গুর খাওয়ার ফলে কোন কোন সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় তার সকল তথ্য বলা আছে এই আর্টিকেলে।
সূচিপত্রঃ আঙ্গুর খাওয়ার ১০ কি উপকারিতা

আঙ্গুরের বর্ণনা

আঙ্গুর বা দ্রাক্ষা এক প্রকারের অতি সুস্বাদু একটি ফল। যা লতা জাতীয় দ্রাক্ষালতা গাছে উৎপাদন হয়ে থাকে। আঙ্গুর গাছটি সাধারণত Vitaceae পরিবারের অন্তর্গত। সর্বনিম্ন ৬ টা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩০০ টা পর্যন্ত আঙ্গুর এক থোকায় একসাথে ধরতে পারে। আঙ্গুর খুব ছোট জাতীয় একটি ফল তবে এটার উপকার অনেক।
আঙ্গুর ফলের রং সাধারণত কালো, নীল, সবুজ, সোনালী, বেগুনি, সাদা ও লাল হতে পারে। আঙ্গুর সরাসরি খাওয়া যায়। তার পাশাপাশি আঙ্গুর দিয়ে রস, জেলি, মদ ও আঙ্গুর বীজের তেল তৈরি করা হয়ে থাকে। আবার আঙ্গুর শুকিয়ে কিসমিস তৈরি করা হয়। সেই কিসমিস ও মানব দেহের জন্য অনেক উপকারী। বন্য আঙ্গুরলতা অনেক ক্ষেত্রে পরগাছা হিসেবে অন্য গাছকে গ্রাস করতে পারে।

আঙ্গুরের বিস্তার

আঙ্গুর সাধারণত একটি বিদেশি ফল। তবে বিদেশি হলেও আমাদের দেশের সারা বছরই আঙ্গুর পাওয়া যায়। বিশেষ করে গ্রীষ্ম মৌসুমে আঙ্গুরের দাম একটু চওড়া থাকে। তবে দাম যেটাই হোক না কেন ফলটি খেতে অনেক সুস্বাদু। পাশাপাশি আমাদের দেহের জন্য খুব উপকারী। যতদূর জানা যায় দক্ষিণ আমেরিকায় ও ইউরোপে সর্বপ্রথম আঙ্গুরের চাষ করা হয়েছিল ঘরোয়া ভাবে।
তারপর এটি মানুষ সেবন করার ফলে গবেষণায় বোঝা যায় একটি মানুষের দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি ফল। তারপর ধীরে ধীরে বাণিজ্যিকভাবে আঙ্গুল চাষের বিস্তার লাভ করে। উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশ বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে আঙ্গুর চাষ করে থাকে। আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারত আঙ্গুর চাষের জন্য অনেকটা পরিচিত সারা বিশ্বে।

তবে বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিকভাবে আঙ্গুর চাষ করা হচ্ছে। যার ফলে আমাদের আঙ্গুরের চাহিদা মেটানোর জন্য বহির্বিশ্বের কারো কাছ থেকে আমদানি প্রয়োজন হয় না।

আঙ্গুর চাষের পদ্ধতি

আঙ্গুর চাষের জন্য তেমন বিশাল জায়গার প্রয়োজন হয় না। খুবই অল্প জায়গায় আঙ্গুর চাষ করা সম্ভব। শুধু তার জন্য পরিচর্যা এবং পরিশ্রম করতে হবে। কেননা আঙ্গুর খুবই সৌখিন একটা ফল। অন্যান্য ফলের তুলনায় আঙ্গুরকে একটু বেশি পরিচর্যা করা প্রয়োজন পড়ে। স্বল্প পরিসরে আঙ্গুর চাষের জন্য বসতবাড়ির আঙ্গিনা খুবই উপযোগী একটি জায়গা।

বিশেষ করে বাড়ির আঙ্গিনায় যেসব স্থানে সকাল বিকাল রোদ থাকে আবার বর্ষাকালে পানি জমে না এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে আঙ্গুর চাষের জন্য। তবে শহর কেন্দ্রিক মানুষ যারা আছে তারা চাইলে নিজেদের বাসার ছাদে আঙ্গুর চাষ করতে পারেন। ছাদে বড় ড্রাম বা বড় টপে করে আঙ্গুর চাষ করা সম্ভব। শুধু একটু পরিচর্যা করতে হবে তবে আঙ্গুর গাছ বড় হবে এবং খুব দ্রুত ফল দেবে।
বিশেষ করে আমাদের দেশে রোগীর পথ্য হিসাবে আঙ্গুরের ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে। আগুনে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, শরকরা, চর্বি, থায়ামিন, লৌহ, খনিজ, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, রিবোফ্লাবিন রয়েছে। প্রতি কেজি আঙ্গুর থেকে প্রায় ৪৫০-৪৮০ ক্যালরি খাদ্য শক্তি পাওয়া যায়।

আঙ্গুর খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা

আঙ্গুর একটি সুস্বাদু ফল। তবে আঙ্গুর ফল খাওয়া মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী। কেননা আঙ্গুরের বীজ ও খোসায় প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা আমাদের দেহের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। তো আঙ্গুর খাওয়ার ফলে আপনি কি কি উপকার পাবেন তার ১০ টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
  • ত্বক সুন্দর ও মসৃণ রাখতে
আঙ্গুরে প্রচুর পরিমাণে ফাইটো কেমিক্যাল ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট আছে। যা মানুষের ত্বকের সুরক্ষায় কাজ করে থাকে। আঙ্গুরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যা ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। আর সেজন্যই নিজের ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে আপনি নিয়মিত আঙ্গুর ফল সেবন করতে পারেন।
  • চুলের গোড়া মজবুত করতে
একটু অযত্নেই অনেকের চুলে খুশকি দেখা দেয়। যার কারণে খুব অল্পতেই মাথার চুল পড়ে যায়। এবং খুব অল্প সময়ের চুলের আগা ফেটে গিয়ে রুক্ষ হয়ে পড়ে ও ধূসর রং ধারণ করে। চুলের সমস্যা যাদের আছে তারা নিয়মিত আঙ্গুর খেতে পারে।

কেননা আগুনে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও মাইট্রো ফিউরিক উপাদান রয়েছে। যা চুলের গোড়া শক্ত করতে ও মাথা থেকে খুশকি দূর করতে সাহায্য করে।
  • কিডনি সুস্থ রাখতে
নিয়মিত আঙ্গুর ফল খাওয়ার ফলে খাবারের ইউরিক এসিডের মাত্রা সহনশীল অবস্থায় রাখতে সাহায্য করে। এবং খাবার দ্রুত হজম হয়। তার জন্য কিডনির রোগ ব্যাধি খুব দ্রুত নিস্তার লাভ করে।
  • চোখের সমস্যা দূর করতে
মানুষের চোখ ভালো রাখতে সব চাইতে কার্যকরী ফল হলো আঙ্গুর। বয়স জনিত কারণে যারা চোখের সমস্যায় ভোগেন তারা নিয়মিত আঙ্গুর ফল খেতে পারেন। আঙ্গুর ফলে থাকা ভিটামিন খুব অল্প সময় চোখের সমস্যা দূর করে। আর চোখের সবচাইতে বড় ঔষধ হলো আঙ্গুর ফল।
  • ক্যান্সার রোধ করতে
আঙ্গুর ফলের জুসে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিইনফামিটারির মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে। যা মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রদাহ দূর করতে সাহায্য করে। এই প্রদাহ ক্যান্সার রোগ জন্মের প্রধান কারণ। আর সেটা দূর করে থাকে একমাত্র আঙ্গুর ফল। তাছাড়া আঙ্গুর ফল খাওয়ার ফলে মানুষের মাইগ্রেনের সমস্যা খুব দ্রুত রোধ করা যায়।
  • দেহে নিয়মিত রক্ত সঞ্চালন করা
যেসব মানুষ রক্ত সঞ্চালনের ভারসাম্যহীনতায় ভোগেন তাদের জন্য আঙ্গুরের জুস খুবই উপকারী একটি উপাদান। কেননা আঙ্গুরের জুসে প্রচুর পরিমাণে ফাইটো নিউট্রিয়েন্টস রয়েছে যা মানুষের দেহের রক্ত নিয়মিত সঞ্চালন করতে সাহায্য করে থাকে। পাশাপাশি আঙ্গুর খাওয়ার ফলে দেহের ইনসুলিন বৃদ্ধি হয়।
  • দেহে শক্তি বাড়াতে
একটি শক্তিবর্ধক ফল হল আঙ্গুর। একমুঠো আঙ্গুর খাওয়ার ফলে তাৎক্ষণিকভাবে শরীরে অনেক শক্তি আসে। আঙ্গুরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যার কারণে আঙ্গুর খাওয়ার ফলে দেহে তাৎক্ষণিক শক্তি পাওয়া যায়।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে
মানুষ নিয়মিত আঙ্গুর খাওয়ার ফলে হজম শক্তি অনেকটা বাড়ে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। তাই যারা কোষ্ঠকাঠিন্যতার সমস্যায় ভোগেন তারা নিয়মিত আঙ্গুর খেতে পারেন। কেননা আঙ্গুরে রয়েছে অর্গানিক এসিড, সেলুলাস ও চিনি যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে দেহ সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  • হার্ট সুস্থ রাখতে
যেসব মানুষ হার্টের সমস্যায় ভোগে তারা নিয়মিত আঙ্গুরের জুস সেবন করতে পারেন। কেননা আঙ্গুর খাওয়ার ফলে মানবদেহের খারাপ কোলেস্টেরল হ্রাস পায় ও রক্তচাপ অনেকটা কমে। যার ফলে হার্ট সুস্থ থাকে। বিশেষ করে হার্টের সমস্যা দূর করার জন্য সকালে এবং বিকেলে নিয়ম করে আঙ্গুর খেতে হবে।
  • মাথাব্যথা দূর করতে
অনেক মানুষ আছেন যারা একটানা কাজ করার ফলে অনেক সময় মাথাব্যথা সমস্যা শুরু হয়। তাদের সেই সমস্যা দূর করতে আঙ্গুরের কোন তুলনা নেই। কেননা মাথাব্যথা শুরুর পর তাৎক্ষণিক আপনি যদি আঙ্গুর ফল খান তাহলে খুব দ্রুত মাথাব্যথা থেকে কিছুটা মুক্তি পেতে পারেন। আঙ্গুর ফলে প্রচুর পরিমাণে ফাইটো এসিড থাকে যা তাৎক্ষণিক দেহের ভিতরে গিয়ে মাথাব্যথা নির্মূল করতে সাহায্য করে।

আঙ্গুর বেশি খাওয়ার অপকারিতা

আমরা আমাদের জীবন ধারণের জন্য যতগুলো খাবার খেয়ে থাকি প্রত্যেকটা খাবারের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে। সেজন্য আপনি যে খাবার সেবন করুন না কেন সেটা পরিমাণ মতো খেতে হবে। কেননা আপনি যদি পরিমাণ মতো আঙ্গুর ফল না খান তবে উপকারের চাইতে আপনার দেহের ক্ষতি বেশি হবে।

কেননা সমস্যা অনুযায়ী বেশি সেবন করলে বা বেশি খেলে সেটার ক্ষতিকর প্রভাব আপনার দেহের উপর পড়বে তাতে করে ক্ষতি বেশি হবে এমনকি প্রাণহানি ঘটতে পারে। তাই আপনার সমস্যা অনুযায়ী আঙ্গুর ফল সেবন করুন। পাশাপাশি নিয়মিত আঙ্গুর ফল খেতে হবে তা ছাড়া কোন উপকার হবে না।

নিয়মিত না খেলে সেই খাবার দেহের জন্য কখনো  ভালো কাজ করে না। সেজন্য আপনি যদি আঙ্গুর ফল থেকে সঠিক উপকারিতা পেতে চান তাহলে নিয়মিত এবং পরিমাণমতো আপনাকে খেতে হবে।তবে সেটা আপনার দেহের সমস্যা দূর করতে ভূমিকা রাখবে।

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক, আঙ্গুর খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা সহ আঙ্গুরের সকল তথ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই আর্টিকেলে। আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। যেকোনো শিক্ষণীয় বিষয় জানতে এই ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url