ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি ও ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা

পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা জানুনআসসালামু আলাইকুম, সুপ্রিয় পাঠক ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি ও ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি ও ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা
কেননা এই আর্টিকেলে ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা, ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি সহ ড্রাগন ফলের বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। পাশাপাশি কোন কোন সমস্যায় আপনার ড্রাগন ফল খেতে পারেন সেই সম্পর্কে বলা হয়েছে।
সূচিপত্র: ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি ও ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা

উপস্থাপনা

সুপ্রিয় পাঠক, ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি ও ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে সকল তথ্য জানানো হয়েছে আমাদের এই আর্টিকেলে। আপনি যদি ড্রাগন ফল খাওয়ার সঠিক উপকারিতা জানতে চান পাশাপাশি কোন কোন সমস্যায় আপনি ড্রাগন ফল খাবেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে আমাদের এই আর্টিকেলে।

ড্রাগন ফল (বৈজ্ঞানিক নাম: Hylocereus undatus)

ড্রাগন এক ধরনের ফোণীমনসা প্রজাতির ফল। আমাদের দেশে ড্রাগন হিসাবে পরিচিতি পেলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিতি রয়েছে ড্রাগনের। চীনারা মূলত ড্রাগনকে মুক্তার ড্রাগন ও আগুনে ড্রাগন ফল হিসেবে চিনে। আবার অপরপক্ষে ভিয়েতনামে মিষ্টি ড্রাগন হিসেবে পরিচিতি রয়েছে ড্রাগন ফলের। পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়াতে ড্রাগন ফল হিসেবে ধরা হয়।
আবার থাইল্যান্ডে ড্রাগন স্ফটিক ফল হিসেবে পরিচিত। ড্রাগন ফল একাধিক রঙের হয়ে থাকে। তবে আমাদের দেশে লাল রঙের ড্রাগন ফল বেশি দেখা যায়। বর্তমান বিশ্বে ড্রাগন ফলের চাষ বেশি হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ক্যারিবিয়ান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেসো আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া সহ গ্রীষ্মমন্ডলীয় উপক্রান্তিয় অঞ্চলে।

ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি

বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় ড্রাগন ফলের চাষ করা হয় বাণিজ্যিকভাবে। ড্রাগন ফলের চাষ করার জন্য প্রথমে জায়গা নির্বাচন করতে হবে। তারপর ২-৩ টি চাষ দিয়ে ভালোভাবে মই দিতে হবে। সমতল জমিতে বর্গাকার ভাবে এবং পাহাড়ি জমিতে কন্টুর পদ্ধতিতে ড্রাগনের চারা রোপণ করতে হবে। আমাদের দেশে এপ্রিল থেকে অক্টোবরের মধ্যে ড্রাগনের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।
ড্রাগন ফল বেশি উৎপাদন করতে চাইলে মাতৃ গুনাগুণ বজায় রাখার জন্য অঙ্গজ পদ্ধতিতে বংশবিস্তার ঘটাতে হবে। তাতে করে খুব দ্রুত গাছে ফল আসবে। অঙ্গজ পদ্ধতিতে উপাদিত একটি গাছে ১২-১৮ মাস সময় লাগে ফল ধরতে। এবং ড্রাগনের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। পাশাপাশি পানি সেচের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে ১০-১৪ দিন পর পর শেষ দিতে হবে।

ড্রাগন ফলের রোগ খুবই কম হয়, তবে মূল পচা, কান্ড ও গোড়া পচা রোগ বেশি লক্ষ্য করা যায় ড্রাগনের। আবার পোকামাকড়ের উপদ্রব কমানোর জন্য নিয়মিত ঔষধ দিতে হবে। ড্রাগনের চারা রোপনের ১-১.৫ বছর বয়সের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। ড্রাগন ফল যখন সম্পূর্ণ লাল রং ধারণ করবে তখন সেটা সংগ্রহ করতে হবে। প্রতিবছর ৫-৬ টি পর্যায়ে ড্রাগন ফল সংগ্রহ করা হয়।

ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা

বর্তমান সময়ে মানুষের দেহের নানান সমস্যা সমাধানের জন্য ফলমূল খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা দেহের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য ফলমূল এ থাকা খাদ্য উপাদান বিশেষ ভূমিকা রাখে। আপনার দেহের কোন কোন সমস্যায় আপনি ড্রাগন ফল খেতে পারেন সেই বিষয়ে আলোচনা করা হলোঃ
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে
মানুষের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ড্রাগন ফল। কেননা ড্রাগন ফলে থাকা ফাইভারের কারণে চিনির স্পাইক ধ্বংস করে যাতে করে দেহে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন তৈরি হয় যা খাদ্যের চিনিকে ভেঙে দেয় ফলের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। চিনি নিয়ন্ত্রকের প্রধান কাজ করে থাকে ড্রাগন ফল।
  • চোখ ভালো রাখতে
ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন রয়েছে যা ভেঙে ভিটামিন-এ তে পরিণত হয়। আমাদের চোখের লেন্সে প্রচুর পরিমাণে লুইটেন, জিক্সানথিন ও মেসো-জিক্সানথিন থাকে যা চোখের রোগ প্রতিরোধ করতে এবং চোখের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে কাজ করে থাকে। কেননা একটা মানুষের চোখ ভালো রাখার জন্য প্রতিদিন ৩-৬ মিলিগ্রাম বিটা ক্যারোটিন প্রয়োজন হয়। আর সেটা সম্পূর্ণ পাওয়া যায় ড্রাগন ফল থেকে।
  • হাড় সুস্থ রাখতে
মানুষের হাড় কে শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজন ম্যাগনেসিয়াম যার ড্রাগন ফলে রয়েছে। যেকোনো ধরনের ব্যথা নির্মূল করতে নিয়মিত ড্রাগন ফল খাওয়ার প্রয়োজন। পাশাপাশি হাড়ের রোগের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত ড্রাগন ফল খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • চুলের গোড়া মজবুত করতে
প্রতিদিন নিয়মিত দুধের সাথে ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে দূষণ এবং কৃত্রিম রঙের কারণে চুলের ক্ষতি অনেক কম হয় ও চুলের গোড়া শক্ত হয়। চুলকে মসৃণ ও চকচকে করে চুলের সৌন্দর্য বাড়াতে ড্রাগনের ভূমিকা অপরিসীম।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে
ড্রাগন ফলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা দূষণকে ধ্বংস করে খারাপ ডায়েটের বিরুদ্ধে লড়াই করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে কাজ করে থাকে। ড্রাগন ফলে ভিটামিন সি রয়েছে প্রচুর যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি ও ত্বক মসৃণ করতে সাহায্য করে।
  • হার্ট ভালো রাখার ক্ষেত্রে
মানুষের শরীর নিয়ন্ত্রণ করে হিমোগ্লোবিন যা আয়রন সমৃদ্ধ একটি কোষ। যে কোষগুলো হৃদপিণ্ড থেকে শরীরের বাকি অংশে অক্সিজেন পরিবহনের জন্য কাজ করে থাকে। আয়রনের সমৃদ্ধ উৎস হলো ড্রাগন ফল যা শরীরে হিমোগ্লোবিন উৎপাদন করতে সাহায্য করে।

ড্রাগন ফলের মধ্যে বেটালাইন এবং নাইট্রোজেন যুক্ত রঙ্গক রয়েছে প্রচুর পরিমাণে যা হার্ট সুস্থ রাখতে কাজ করে থাকে। এবং শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমানোর জন্য বেটালাইন অত্যন্ত কার্যকরী উপাদান। তাছাড়াও ড্রাগন ফলের কালো বীজে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৯ নাইন রয়েছে যা কার্ডিওভাসকুলার রোগের সম্ভাবনা কমায় এবং হার্ট ভালো রাখার জন্য কাজ করে।
  • হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে
অলিগোস্যাকারাইডের মতো প্রিবায়োটিক রয়েছে ড্রাগন ফলে। যা মানুষের শরীরের অন্ত্রের ভালো করে এবং ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করতে কাজ করে থাকে। পাশাপাশি খাদ্য হজম করতে কাজ করে থাকে সেই প্রিবায়োটিক উপাদান। তার পাশাপাশি খাদ্যকে সহজে শুষিত করার জন্য যে ব্যাকটেরিয়ার প্রয়োজন সেটা ড্রাগন ফল থেকে পাওয়া যায়। তাছাড়াও শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত রাখার জন্য ভিটামিন সরবরাহ করে থাকে ড্রাগন ফল।
  • ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্ল্যাভোনয়েড, ফেনোলিক এসিড ও বিটাসায়ানিন সমৃদ্ধ ফল হলো ড্রাগন। তাছাড়াও ড্রাগনে ফ্রি রেডিকেল থাকে অনেক। অকাল বাধ্যক্য এবং ক্যান্সার থেকে মুক্তির জন্য ফ্রি রেডিকেল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলোর মধ্যে ভিটামিন সি যা মানুষের দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে থাকে।

আর ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে পাওয়া যায়। যে কোন ধরনের জীবাণু শরীর থেকে দ্রুত নির্বাসন করতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর কোন বিকল্প নেই। আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে উৎপাদন করার জন্য ড্রাগন খাওয়ার কোন বিকল্প নেই।
  • ড্রাগন ফলের অন্যান্য উপকারিতা
ড্রাগন ফল সুষম খাদ্যের অংশ হিসাবে নিয়মিত খাওয়া যাবে। কারণ মানুষের দেহ ঠিক রাখার জন্য প্রচুর পুষ্টির প্রয়োজন হয়। আর সেই পুষ্টির সরবরাহ করে দেহকে সুন্দর রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে ড্রাগন ফল। পাশাপাশি ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে অনেক বড় ধরনের সমস্যা থেকে খুব সহজে নিস্তার পাওয়া যায় এবং শরীরের দূষিত জীবানু খুব সহজে নির্মূল করা যায়। তাই নিজের শরীরের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার জন্য আপনি নিয়মিত ড্রাগন ফল খেতে পারেন।

ড্রাগন ফল অতিরিক্ত খাওয়ার অপকারিতা

প্রতিটা খাদ্যের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া বিদ্যমান। বিশেষ করে এলার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা যায় ড্রাগন অতিরিক্ত খেলে। জিহ্বা ফুলে যাওয়া, বমি হওয়া এবং আমবাত হওয়া সহ নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে ড্রাগন অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী ড্রাগন ফল খেতে হবে। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। পাশাপাশি ড্রাগন ফলের উপকারিতা ভোগ করতে চাইলে নিয়ম মেনে এবং পরিমাণ মতো ড্রাগন ফল খান। তাহলে খুব দ্রুত আপনি আপনার সমস্যা থেকে সমাধান পেয়ে যাবেন।

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক, ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি ও ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা সহ ড্রাগন ফলের সকল তথ্য জানানো হয়েছে আমাদের এই আর্টিকেলে। এই আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে থাকলে এটি অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। যেকোন বিষয়ের সঠিক তথ্য জানতে এই ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url