পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা কত জানুন

শাক-সবজি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুনআসসালামু আলাইকুম, সুপ্রিয় পাঠক পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা কত জানুন ও পেঁপে বেশি খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাইলে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা কত জানুন
কেননা এই আর্টিকেলে পেঁপের সকল তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আপনার সমস্যা সমাধানে পেঁপে কি ভূমিকা রাখে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন এই আর্টিকেলে। তাই পেঁপের সকল তথ্য জানতে চাইলে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
সূচিপত্রঃ পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা কত জানুন

পেঁপের পরিচিতি

Carica papaya হলো পেঁপের বৈজ্ঞানিক নাম। পেঁপে একটি ফল জামা মানুষ কাঁচা থাকা অবস্থায় সবজি হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। আবার পেঁপে পাকলে তা ফল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পেঁপে তে অনেক ভেষজ উপাদান রয়েছে। পেঁপের ইউনানী নাম হলো পাপিতা। তাছাড়া পেঁপের আয়ুর্বেদিক নাম হলো অমৃততুম্বী।

পেঁপের আকার আকৃতি

পেঁপে একটি ছোট্ট আকৃতির অসাধ বৃক্ষ বিশেষ। বোটাযুক্ত লম্বা ছত্রাকার পাতা বেশ বড় হয়ে থাকে। এবং তা সর্পিল আকারের কান্ড যার উপর সজ্জিত থাকে। প্রায় সারা বছরই পেঁপের ফলন পাওয়া যায়। কাঁচা ফল সবুজ হয় ও পাকা ফল হলুদ বা পীত বর্ণের হয়। কাঁচা এবং পাকা দুই অবস্থাতেই পেঁপে খাওয়া যায়। কাঁচা ফল বাইরের দিকে গাড় কালচে সবুজ এবং পাকলে খোসার সহ কমলা রঙ ধারণ করে থাকে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে পেঁপে কে হইয়া নামেও ডাকা হয়।

পেঁপের বিস্তৃতি

পেঁপে এমন একটা সবজি বা ফল সারা বছর এঁকে বাজারে পাওয়া যায়। সারা পৃথিবীতেই পেঁপে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়ে থাকে। তবে বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, ব্রাজিল, আমেরিকা এসব দেশে বাণিজ্যিকভাবে পেঁপের চাষ বেশি হয়।

পেঁপের ব্যবহার্য অংশ

পেঁপের সবকিছুই ব্যবহার হয়ে থাকে বর্তমানে। যেমন তরুক্ষীর, পাতা, ফল ও বীজ। তবে প্রধানত মানুষের খাবার হিসেবে ফলের ব্যবহার সর্বত্র বেশি। আবার নতুন চারা বানানোর জন্য বীজের ব্যবহার ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা কত জানুন

মানব দেহে অনেক রকমের সমস্যা দেখা যায় যেগুলো সমাধান করার জন্য পেঁপে খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। কেননা পেঁপে তে অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে যা খাওয়ার ফলে মানব দেহের নানা সমস্যা ও রোগ নিরাময় হয়ে যায়।
তো পেঁপে খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হলোঃ
  • ব্রণ ও দাগ দূর করা
আপনি যদি নিয়মিত পাকা পেঁপে ব্যবহার তাহলে খুব দ্রুত আপনার মুখের ব্রণ ও কালো দাগ দূর করা সম্ভব। প্রথমে এক টুকরো পেঁপে নিয়ে ব্রণ অথবা কালো দাগ আক্রান্ত স্থানে ভালো করে ঘষে নিন। তারপরে ২০ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত রেখে দিন। তারপর পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে কমপক্ষে ৩/৪ বার ব্যবহার করুন।

পেঁপে তে থাকার উপাদান পেপিন মরা কোষ দূর করতে সাহায্য করে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। যার ফলে খুব অল্প সময়ে আপনার মুখের ব্রণ ও কালো দাগ নিরাময় হয়ে যাবে।
  • হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
মানব দেহের হজমের গোলমাল একটি ব্যাপক সমস্যা। মানুষের হজম শক্তি কমে গেলে অম্বল হয়ে যায়, মুখ দিয়ে চোকা ঢেকুর উঠে, সব সময় পেটে ব্যথা অনুভূত হয়। কখনো কখনো চিন চিনে ব্যথা হয় আবার কখনো কখনো ভয়ঙ্কর ব্যথা হয়। যার ফলে মানুষের ভিতরে অস্বস্তি বোধ আসে।
পেটে ব্যথা হওয়ার ফলে পেটের কোষ্ঠ পরিষ্কার হয় না যার ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে ও শরীরে অবসাদ দেখা দেয়। পেঁপে তে প্রচুর পরিমাণে এনজাইম আছে যা খাবার হজম করতে সাহায্য করে থাকে। তাছাড়া রয়েছে প্রচুর পানি ও দ্রবণীয় ফাইবার যার ফলে হজমের সমস্যা খুব দ্রুত সময়ে নিরাময় হয়ে যায়। তাই দেহের হজম শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য আপনি নিয়মিত পেঁপে খেতে পারেন।
  • আমাশয় নিরাময় করতে
শরীরে আমাশয় ও পেটে যন্ত্রণা অনুভব হতো হলে কাঁচা পেঁপের আঠা ২৫/৩০ ফোটা সাথে ১ চা চামচ চুনের পানি মিশিয়ে তাতে একটু দুধ দিয়ে খেতে পারেন। তার ফলে খুব দ্রুত সময়ে শরীরের আমার হয় দূর হবে ও পেটের যন্ত্রণা কমে যাবে। আমাশয় থেকে খুব দ্রুত নিরাময় দেয়ার জন্য প্রচুর পরিমাণে অদ্ভুদ শক্তি আছে কাঁচা পেঁপের আঠায়।
  • ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে
যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা নিয়মিত পেঁপে খেতে পারেন। কেননা পেঁপেতে চিনির পরিমাণ খুবই কম থাকে যার ফলে ডায়াবেটিস থাকা মানুষের জন্য পেঁপে একটি আদর্শ ফল। তার পাশাপাশি যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদের খাদ্য তালিকায় পেঁপে রাখা উচিত। কেননা পেঁপে ডায়াবেটিস হওয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
  • হাড়ের ব্যথা দূর করতে
পেঁপে তে প্রচুর পরিমাণে কপার, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম রয়েছে। সে কারণে নিয়মিত খাদ্য তালিকায় পেঁপে থাকলে শরীরে ক্যালসিয়াম তৈরি হয়। যা হাড় মজবুত করে ও হাড়ের ব্যথা আর হ্রাস করতে সাহায্য করে।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে
কাঁচা পেঁপে খাওয়া শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কাঁচা পেঁপেতে প্রোতিওলাইটিক এনজাইম রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। যা প্রোটিন হজম করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি শরীরের ক্যান্সার দেখা দিলে সেটি নিরাময়ে ভূমিকা রাখে কাঁচা পেঁপে। সে কারণে পেঁপে রান্নার পরিবর্তে কাঁচা খাওয়াটাই অনেক উপকারী।

তাছাড়া পেঁপে তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনক্সিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহের ক্যান্সার কোষ তৈরি করতে বাধা প্রদান করে থাকে। আবার পেঁপের বিটা কেরোটিন উপাদান যা কোলন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
  • শরীর শুকিয়ে গেলে পেঁপে খান
কোন কারন বসত যদি আপনার শরীর শুকিয়ে যায়। অবসাদ জনিত ক্লান্তি, মরা ভাব, পড়াশোনা বা কাজকর্মে অনীহা আসে তাহলে পেঁপে খাওয়ার ফলে খুব দ্রুত আপনি এই সমস্যা থেকে সমাধান পেতে পারেন। কাঁচা বা পাকা যেকোনো অবস্থাতেই হোক না কেন সকাল ও বিকেল প্রতিদিন নিয়মিত কয়েক টুকরো করে পেঁপে খেতে পারেন কমপক্ষে ২ মাস।
  • উচ্চ রক্তচাপ কম রাখতে
কাঁচা পেঁপে খাওয়ার ফলে আমাদের দেহের সঠিক রক্ত সরবরাহ কাজ করে থাকে। পাশাপাশি আমাদের দেহে জমা থাকা সোডিয়াম দূর করতে সাহায্য করে জাহিদ পিণ্ড রোগের জন্য দায়ী। বিশেষ করে মধ্যবয়সী মানুষের রক্তচাপ সমস্যা বেশি দেখা দেয়। তার কয়েকটা লক্ষণ চোখে পড়ে যায় যেমন শরীরের কোন অংশ অকেজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, শরীরে অলসতা দেখা দেওয়াসহ নানা সমস্যা।

এ ধরনের জনিত যারা আছেন তারা নিয়মিত কাঁচা বা পাকা পেঁপে সেবন করতে পারেন তার ফলে উচ্চ রক্তচাপের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন। পেঁপে খাওয়ার ফলে হৃৎপিণ্ড জনিত যে কোন সমস্যার সমাধান খুব দ্রুত মিলে।
  • ফাইলেরিয়া রোগ নিরাময় করতে
মশাবাহিত একটি রোগ হল ফাইলেরিয়া। ফাইলেরিয়া বিভিন্ন উপসর্গ নিরাময় পেঁপে গাছকে ব্যবহার করা হয়। পেঁপের পাতা সংগ্রহ করে সেগুলোকে গরম পানিতে ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে, তারপর পাতাগুলো গরম থাকা অবস্থায় সেকে নিয়ে নিয়মিত কয়েকদিন সেক দিলে ফাইলেরিয়া উপসর্গ অনেকটা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • কোলেস্টেরল দূর করতে
পেঁপে তে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহ নানা উপাদান যা ধমনীতে কোলেস্টেরল জমতে বাধা প্রদান করে। চর্বি জমার কারণে হার্ট অ্যাটাকের মত ঘটনাও ঘটতে পারে। তার পাশাপাশি কাচা পেঁপে খাওয়ার ফলে মেদ অনেকটা কমে যায়। মোটা যারা আছেন নিজেদের শরীর কমাতে আপনার নিয়মিত কাঁচা পেঁপে খেতে পারেন।

পেঁপে বেশি খাওয়ার অপকারিতা

প্রতিটা খাদ্যের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বিদ্যমান। সে কারণে প্রত্যেকটা খাবার আমাদের পরিমাণমতো খেতে হবে। পরিমাণ মতো খাবার না খেলে উপকারের চাইতে ক্ষতি অনেক বেশি হবে। যার ফলে দেহে নানা রকম সমস্যা দেখা দিবে এমনকি সেই সমস্যার ফলে প্রাণহানি পর্যন্ত ঘটতে পারে। সে কারণে আপনার সমস্যা বুঝে পেঁপে খেতে হবে।

পরিমাণ এর চাইতে বেশি সেবন করা বা খাওয়া কখনোই ঠিক হবে না। তার পাশাপাশি নিয়মিত পেঁপে খেতে হবে। তাছাড়া কোন প্রকার উপকারে আসবে না। তার জন্য আপনি যদি পেঁপের সঠিক উপকারিতা উপভোগ করতে চান তাহলে অবশ্যই সমস্যা বুঝে পরিমাণ মতো এবং নিয়মিত পেঁপে খান। তাহলে অবশ্যই আপনি আপনার সমস্যা থেকে দ্রুত নিস্তার পাবেন।

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক, পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা কত জানুন ও পেঁপে বেশি খাওয়ার অপকারিতা সহ পেঁপের সকল গুনাগুন আলোচনা করা হয়েছে এই আর্টিকেলে। আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে থাকলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। যেকোনো শিক্ষনীয় বিষয় জানতে এই ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url