কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

আঙ্গুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুনআসসালামু আলাইকুম, সুপ্রিয় পাঠক কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন ও কিসমিসে থাকা পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
কেননা এই আর্টিকেলে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সহ কিসমিসের সকল গুনাগুণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। পাশাপাশি কিসমিস খাওয়ার ফলে আপনি কোন কোন সমস্যার সমাধান পাবেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
সূচিপত্রঃ কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

কিসমিসের বর্ণনা

কিসমিস হলো শুকনো আঙ্গুর। যাকে ইংরেজিতে রেইসিনো বলা হয়। বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে কিসমিস উৎপাদন করা হয়ে থাকে। এটি সরাসরি খাওয়া যায় আবার বিভিন্ন খাদ্য রান্নার সময় উপকরণ হিসেবে কিসমিস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি প্রাচীন কাল থেকে মানবদেহে শক্তি বা ক্যালোরির চমৎকার উৎস হিসেবে কাজ করে আসছে। কিসমিস তৈরি করা হয়ে থাকে মাইক্রোওয়েভ ওভেন এর সাহায্যে বা সূর্যের তাপের সাহায্যে।
অতিরিক্ত তাপের কারণে এগুলো জবাট বেঁধে কিসমিসে পরিণত হয়ে থাকে। প্রধানত আঙ্গুর শুকিয়ে তৈরি করা হয় কিসমিস। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিবানে পটাশিয়াম যা মানব দেহের হার্ট ভালো রাখে এবং খারাপ কোলেস্টরল দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে কিসমিস। কিসমিসে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্বোহাইট্রেট যা মানব শরীরে এনার্জি যোগায়। বিশেষ করে মহিলারা রক্তস্বল্পতায় ভোগেন তাই চিকিৎসকের মতে কিসমিস খাওয়া মহিলাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশি উপকারী।

কিসমিসের বিস্তৃতি

বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কিসমিস উৎপাদন করা হয়ে থাকে তবে বিশেষ করে ইরান, ইরাক, ভারত ও পাকিস্তানে উৎপাদন তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে।

কিসমিসে থাকা পুষ্টি উপাদান

কিসমিসের ওজন অনুসারে প্রায় ৭২ শতাংশ শর্করা থাকতে পারে, যার বেশিরভাগ ফ্রুকোজ ও গ্লুকোজ। তাছাড়াও ৩ শতাংশ প্রোটিন ৩.৭ - ৬.৮ শতাংশ ডায়েটার ফাইবারও রয়েছে। আমেরিকান কলেজ অফ কার্ডিওলজির ৬১ তম বার্ষিক বৈজ্ঞানিক অধিবেশন ২০১৪ তে উপস্থিত উপাত্ত থেকে জানা গেছে যে রক্তচাপের হালকা পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কিসমিস নিয়মিত সেবন করার ফলে (দিনে ৩ বার) রক্তচাপকে অন্যান্য সাধারণ স্ন্যাকস তুলনায় উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস করতে পারে।

কিসমিসের ব্যবহার

যেকোনো ধরনের মিষ্টি খাবারের স্বাদ এবং সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য কিসমিস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাছাড়াও কোরমা, পোলাও এবং অন্যান্য অনেক খাবারের সাথে কিসমিস ব্যবহার করা হয়। কিসমিস কে শুকনো ফলের রাজা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বাদামি-সোনালী রঙের চুপসানো ভাজ হওয়া ফলটি মানবদেহের খুবই শক্তি দায়ক উপাদান হিসেবে কাজ করে।

কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা কথায় প্রকাশ করে শেষ করা যাবে না। এমনকি কিসমিস ভেজানো পানিও শরীরের জন্য অনেক উপকারী উপাদান হিসেবে কাজ করে। তাছাড়াও কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ, আন্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, পলিফেনলস এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি ফাইবার উপাদান রয়েছে। কিসমিস শরীরে শক্তি যোগায় এবং রক্ত উৎপাদনে সহায়তা করে থাকে।
কিসমিসের বেশ কয়েকটি বিশেষ উপাদান রয়েছে যা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং সেসব খেলে মানবদেহের অনেকটা সমস্যা দূর হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কিসমিসের ভূমিকা
কিশমিশে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা দেহের পরিপাকক্রিয়ায় দ্রুত সাহায্য করে যা শরীরের খাবার সহজে হজম হয় এবং শরীরের কোষ্ঠকাঠিন্যর মত সমস্যা দূর হয়।
  • সুস্থভাবে দেহের ওজন বাড়াতে কিসমিসের ভূমিকা
অনেক মানুষ আছে যারা দেহের ওজন কমাতে চায় না বা ওজন বাড়ানোর দিকে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করে। সে সব মানুষের জন্য ওজন বাড়ানোর একমাত্র ওষুধ হিসেবে কাজ করে হলো কিসমিস। কেননা কিসমিস একটি খুবই ভালো উপাদান সমৃদ্ধ ফল বা খাদ্য যা খেলে মানুষ খুব দ্রুত ওজন বাড়াতে পারে নিজের দেহের। তাই আপনি ওজন বাড়াতে চাইলে নিয়মিত কিসমিস সেবন করুন।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধে কিসমিসের ভূমিকা
কিসমিসে ক্যাটেচিন নামক এক ধরনের এন্টিওক্সিডান্ট থাকে যা দেহের ভেসে বেড়ানো ফ্রি র‍্যাডিকলগুলিকে লড়াই করে খুব অল্প সময়ে নিঃশেষ করে দেয়। যার ফলে মানবদেহে ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগ সহজে বাসা বাঁধতে পারে না এবং মানুষের কোন ক্ষতিও করতে পারেনা। তাই নিয়মিত কিসমিস সেবন করলে শরীরে ক্যাটেচিন এর মত শক্তিশালী আন্টিঅক্সিডান্ট এর মাত্রা বৃদ্ধি পায় ফলে ক্যান্সার প্রতিরোধ হয় খুব সহজে।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিসমিসের ভূমিকা
কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে যা রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। মানুষের শরীরে থাকা উচ্চমাত্রায় সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়ানোর প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করে থাকে। কিসমিস নিয়মিত খাওয়ার ফলে সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে যার ফলে রক্ত নিয়ন্ত্রণে থাকে। তার ফলে মানুষের দেহে কখনো রক্তচাপ দেখা দেয় না।
  • হাড়ের স্বাস্থ্য বর্ধনে কিসমিসের ভূমিকা
কিসমিসের প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় যা হাড় ও দাঁতের জন্য খুবই প্রয়োজন। তাছাড়াও কিসমিসে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট থাকে যা সঠিকভাবে মানবদেহের হাড় গঠন করতে সাহায্য করে ও ক্যালসিয়ামকে তাড়াতাড়ি শুয়ে দিতে সাহায্য করে শরীরকে। মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট শরীরে খুব সামান্য পরিমাণে প্রয়োজন যা শুধুমাত্র কিসমিস থেকেই পাওয়া সম্ভব হয়ে থাকে। তবে এর গুরুত্ব অপরিসীম দেহ সুস্থ রাখতে। তাই হাড় ও দাঁত শক্ত রাখার জন্য নিয়মিত কিসমিস সেবন করা প্রয়োজন।
  • ঘুম বেশি হওয়ার জন্য কিসমিসের ভূমিকা
মানবদেহ সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত ঘুমানো খুব প্রয়োজন। কেননা ঘুম ভালো না হলে শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি মানসিক নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে জাদুকরী ভূমিকা পালন করে থাকে কিসমিস। কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে যা ঘুম ভালো হতে সাহায্য করে থাকে। কেননা আয়রন খুবই গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যা শুধু মাত্র হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন বৃদ্ধি করে না বরং বিপাক ক্রিয়া উন্নত করে, যার ফলে ঘুম ভালো হয় ও শরীর সুস্থ থাকে। মানবদের অনেক উপকার হয় কিসমিস খাওয়ার ফলে কেননা কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, আয়রন, ক্যালসিয়া্‌ পটাশিয়াম ও অতি প্রয়োজনীয় পুষ্টির সমৃদ্ধ উৎস রয়েছে।
যা দেহকে শক্তি যোগায়, দেহের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, মাথার চুল শক্ত রাখতে সাহায্য করে ও সহজে চুল ঝরে পড়ে না। কিসমিস খাওয়ার পাশাপাশি কিসমিস ভিজিয়ে রাখা পানি দেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। বিশেষ করে দেহের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার জন্য আমাদের প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা প্রয়োজন পড়ে সেজন্য কিসমিস ভেজানো পানি পান করার ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়, ত্বকের সৌন্দর্য দীর্ঘদিন ধরে রাখা সম্ভব হয়, তাছাড়া দেহের যেকোন সমস্যার সমাধানে নিয়মিত কিসমিস সেবন করলে খুব সহজেই সমাধান পাওয়া সম্ভব। এজন্য দেহ সুস্থ রাখতে ও দেহের সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য কিসমিস সেবন করুন।

কিসমিস বেশি খাওয়ার অপকারিতা

প্রত্যেকটা খাদ্যের উপকার এবং অপকার দুটোই রয়েছে কেননা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সেবন করলে সমস্যা সমাধানের চাইতে আরো সমস্যা জটিল আকার ধারণ করতে পারে। সেজন্য পরিমাণমতো এবং নিয়ম মেনে কিসমিস সেবন করা প্রয়োজন। তবে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত সেবন করলে উপকারের চাইতে অপকার বেশি হবে। সে কারণে পরিমাণ মতো খেতে হবে এবং তার পাশাপাশি সময় অনুযায়ী খেতে হবে। কেননা আপনি যদি সময় মাফিক না খান তাহলে আপনার সমস্যার সমাধান পাওয়া খুব কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। তার জন্য সময় মেনে এবং পরিমাণ মতো কিসমিস সেবন করুন তাহলে আপনি দ্রুত সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন।

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক, আরবিআর ব্লগের এই আর্টিকেলে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। যেকোন শিক্ষণীয় বিষয় জানতে আরবিআর ব্লগের গুগল নিউজে ফলো দিয়ে রাখুন। আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url