নিম পাতার ১০ টি উপকারিতা

খেজুর খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা সম্পর্কে জানুনআসসালামু আলাইকুম, সুপ্রিয় পাঠক নিম পাতার ১০ টি উপকারিতা ও নিমের ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
নিম পাতার ১০ টি উপকারিতা
আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন নিম পাতার ১০ টি উপকারিতা ও নিমের ঔষধি গুনাগুন সহ নিম পাতার সকল গুণাগুণ ও তথ্য। তাই নিমের বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনি সম্পূর্ণ পড়ুন।
সূচিপত্রঃ নিম পাতার ১০ টি উপকারিতা

উপস্থাপনা

বর্তমান সময়ে মানুষের দেহের নানান সমস্যা সমাধানের জন্য নিমের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে কোন সমস্যায় আপনি নিম ব্যবহার করবেন সেটা আপনার জানা খুব জরুরী। সেজন্যই কোন কোন সমস্যায় আপনি নিমের ব্যবহার করবেন বা নিম ব্যবহার করার ফলে কোন কোন সমস্যার সমাধান পাবেন সেটা জানানো হয়েছে আমাদের আজকের আর্টিকেলে।

নিম পাতা

নিম পাতার বৈজ্ঞানিক নাম হলো Azadirachta Indica যা একটি ওষুধি গাছ। নিম গাছের পাতা, ডাল, রস সবকিছুই মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বহুল কাজে ব্যবহৃত হয়। নিম একটি চিরহরিৎ ও বহুবর্ষজীবি বৃক্ষ। নিম গাছ আকৃতিতে সাধারণত ৫০ থেকে ৫৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। নিম গাছের কান্ডের ব্যাস ২০ থেকে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়।

ডালের চারিদিকে ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি যৌগিক পাতা জন্মে থাকে। নিম গাছের পাতা মূলত কাস্তের মতো বাঁকানো হয় এবং প্রতিটি পাতার কিনারায় ১২ থেকে ১৭ টি করে খাজযুক্ত অংশ থাকে। নিম গাছের পাতা ৩ থেকে ৫ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। নিমগাছে আঙ্গুরের মতো দেখতে এক ধরনের ফল হয়। পাশাপাশি প্রত্যেকটা ফলে একটি করে বীজ থাকে।
সাধারণত জুন-জুলাই মাসে নিমের ফল পাকে এবং কাঁচা ফল অনেক তেতো হয়। নিম ফল পাকার পরে হলুদ রং ধারণ করে পাশাপাশি মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে। নিমগাছ মূলত ১০ বছর সময় লাগে প্রাপ্তবয়স্ক হতে। বিশেষ করে উষ্ণ অঞ্চলে নিম গাছ অনেক ভালো জন্মে। বর্তমান বিশ্বে নিমের পাতা থেকে প্রসাধনী তৈরি হচ্ছে।

নিমের রস ক্রিমিনাশক হিসাবে খুবই কার্যকরী। মিমের কাঠ অনেক শক্ত হয়ে থাকে। নিমের কাঠে কখনো পোকা বাসা বাঁধতে পারে না ও ঘুনে ধরেনা। উইপোকা নিমের কাঠ খেতে পারে না। কারণ নিমের কাঠ অনেক তেতো হয়। বর্তমান সময়ে নিম কাঠের ব্যবহার অনেকটা বেশি হয়। যার কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিম গাছকে একুশ শতকের বৃক্ষ বলে ঘোষণা করেছে।

নিমের উৎপত্তি

নিমের উৎপত্তি হয়েছিল মূলত গ্রীষ্মমন্ডলীয় ভারত, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও পশ্চিম আফ্রিকাতে। তবে নিমের আদিবাস বলা হয় মিয়ানমার কে।

নিমের ব্যবহার্য অংশ

নিম গাছের প্রায় সবকিছুই ব্যবহার করা হয়ে থাকে যেমন, পাতা, ছাল বা বাকল, ফল, বীজ ও নিমের তেল। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে কবিরাজি ওষুধে নিমের ব্যবহার সবচাইতে বেশি হয়ে থাকে।

নিমের ঔষধি গুনাগুন

বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বব্যাপী নিম গাছের পাতা, শিকড়, নিমের ফল ও নিম গাছের বাকল ঔষধের কাঁচামাল হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। বর্তমান সময়ে অ্যান্টিসেপটিক হিসাবে নিমের কদর রয়েছে সমগ্র বিশ্বে। নিম ছত্রাক নাশক হিসেবে ও ব্যাকটেরিয়া রোধক হিসাবে এবং ভাইরাস রোদক হিসেবে ব্যাপক কাজ করে থাকে। বিশেষ করে দন্ত চিকিৎসায় ব্যথা মুক্তি এবং শরীরের জ্বর কমাতে তার পাশাপাশি জন্মনিয়ন্ত্রণে নিমের ব্যাপক ব্যবহার করা হয়।

নিম পাতার ১০ টি উপকারিতা

বর্তমান বিশ্বে মানবদেহের নানান সমস্যার সমাধান করা হয় নিমের মাধ্যমে। নিম পাতা ব্যবহার করে আপনি অনেক সমস্যার সমাধান পেতে পারেন। কোন কোন সমস্যায় আপনি নিমপাতা ব্যবহার করবেন সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
  • কাশিজনিত বুকের ব্যথা নিরাময়ে
অনেক সময় মানুষের বুকের মধ্যে কফ জমে বুকে ব্যথা অনুভূত হয়। তার জন্য ২৫ থেকে ৩০ ফোটা নিম পাতার রস হালকা কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন ৩-৪ বার সেবন করলে বুকের ব্যথা দূর করা সম্ভব হবে। তবে কোন গর্ববতী মহিলা, ছোট অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এটি সেবন করা সম্পূর্ণ নিষেধ।
  • পেটের কৃমি নিরাময়ে
মানুষের পেটে কৃমি হলে মানুষ ক্রমশ রোগা হয়ে যায়। ধীরে ধীরে পেট অনেক বড় হয়। চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে পড়ে। তার জন্য ৫০-৫৫ মিলিগ্রাম পরিমাণ নিম গাছের মূলের ছালের গুঁড়ো হালকা গরম পানি দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩-৫ বার সেবন করলে খুব দ্রুত কৃমির সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
  • মাথার উকুন দূর করতে নিমের ব্যবহার
আপনার মাথায় যদি অতিরিক্ত পরিমাণে উকুনের দেখা মেলে তবে আপনি নিমের পাতা ভালো করে বেটে নিয়ে হালকা করে মাথায় লাগিয়ে ১ ঘন্টা পরে মাথা ধুয়ে ফেলুন। তাহলে ২-৩ দিনের মধ্যে মাথার উকুন দূর হয়ে যাবে। এবং ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য মাসে কমপক্ষে ৩-৪ বার নিমপাতা ব্যবহার করতে পারেন।
  • পেটের সমস্যা নিরাময়ে
আপনার যদি দীর্ঘদিন যাবত পেটের সমস্যা ও পাতলা পায়খানা হয় তবে আপনি ২৫-৩০ ফোটা নিম পাতার রস আধা কাপ পানির সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে খেতে পারেন। তবে আপনার পেটের সমস্যা খুব দ্রুত দূর হবে।
  • দাঁতের সমস্যা নিরাময়ে
আপনার যদি দাঁতের সমস্যা থেকে থাকে তবে আপনি নিমের ব্যবহার করতে পারেন। কেননা নিমের পাতা ও নিম গাছের ছালের গুঁড়ো কিংবা নিম গাছের ডাল দিয়ে নিয়মিত দাঁত মাজলে দাঁতের গোড়া অনেক মজবুত হয় এবং দাঁতে কোনো রকমের পোকামাকড়, ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধতে পারে না। যার ফলে যে কোন খাদ্য গ্রহণের সময় দাঁতে কোনরকম ব্যথা অনুভূত হয় না।
  • জন্ম নিয়ন্ত্রণে নিমের ব্যবহার
মানুষের জন্ম নিয়ন্ত্রণে নিমের ব্যবহার বিভিন্ন উপায় হয়ে থাকে। যেমন নিমের তেল এমন একটি শক্তিশালী শুক্রানু নাশক উপাদান যা মহিলাদের জন্য নতুন ধরনের কার্যকরী গর্ভনিরোধক হিসেবে কাজ করে। নিমের তেল ২৫-৩০ সেকেন্ডের মধ্যে শুক্রাণু মেরে ফেলতে সক্ষম।
  • ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে নিমের ব্যবহার
আপনার যদি ব্লাড সুগার নিয়ে সমস্যা থাকে তাহলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১৫-২০ টি কাঁচা নিমপাতা চিবিয়ে খান তাহলে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। পাশাপাশি চিবিয়ে খেতে অসুবিধা হলে একই নিয়মে ৫-৬ চা চামচ নিম পাতার রস খান তাহলে ব্লাড সুগার খুব সহজে নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
  • পোকা-মাকড়ের কামড়ের বিষ নিরাময়ে
আপনাকে যদি কোন পোকা-মাকড় কামড় দিয়ে থাকে বা হুল ফুটিয়ে দেয় তবে আপনি নিম গাছের মূলের ছাল অথবা নিমপাতা ভালো করে বেটে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে লাগিয়ে দিলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ব্যথা নিরাময় করা সম্ভব।
  • ব্রণ দূর করতে ও ত্বক মসৃণ রাখতে
আপনার যদি ত্বকে অতিরিক্ত ব্রণ দেখা যায় তবে আপনি কিছু নিমপাতা গুঁড়ো করে পেস্ট বানিয়ে সুন্দর করে ব্রণে লাগিয়ে দিন। যতদিন পর্যন্ত ব্রণ সম্পূর্ণ না শুকাচ্ছে ততদিন পর্যন্ত নিয়মিত সেই পেস্ট ব্যবহার করুন। তাছাড়া মুখে যে কোন ধরনের ফুসকুড়ি, ডার্ক স্পট এবং পুরাতন ঘা দূর করতে নিম পাতা ব্যবহার করতে পারেন।
  • দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিমের ব্যবহার
নিজের দেহকে সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন কিছু নিম পাতা চূর্ণ করে একগ্লাস পানির সাথে খালি পেটে সেবন করলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। যার ফলে কোন রোগ জীবাণু দেহের মধ্যে প্রবেশ করতে পারেনা ও শরীর সুস্থ থাকে।

নিম গাছ চাষ করে আয়

বর্তমান বিশ্বে নিমের ব্যবহার এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে বাণিজ্যিকভাবে নিমের চাষ করা হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। কেননা একটি প্রাপ্তবয়স্ক নিম গাছ থেকে প্রায় ৫০-৬০ কেজি ফল পাওয়া যায় যার বাজার মূল্য ৫-৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। তাছাড়া একটি পূর্ণবয়স্ক গাছ এককালীন ১৭-২০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। যা দিয়ে নানান রকমের ফার্নিচার তৈরি হয়ে থাকে। তাই বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাণিজ্যিকভাবে নিমের চাষ করা হচ্ছে।

শেষ কথা

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাকে জানিয়েছি নিম পাতার ১০ টি উপকারিতা সহ নিমের সকল তথ্য। আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে এটি অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। যেকোনো শিক্ষনীয় বিষয় জানতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url