তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

আম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুনআসসালামু আলাইকুম, সুপ্রিয় পাঠক তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন ও তেঁতুলের উপাদান সম্পর্কে জানতে হলে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
কেননা এই আর্টিকেলে তেঁতুলের বিবরণ উৎপত্তি সহ তেঁতুলের যাবতীয় বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। পাশাপাশি আপনি কোন কোন সমস্যায় তেঁতুল খাবেন তার বিস্তারিত বলা হয়েছে। অতিরিক্ত তেঁতুল খাওয়ার ফলে কি কি সমস্যা হবে সে সম্পর্কেও বর্ণনা করা হয়েছে এই আরটিকালে।
সূচিপত্র: তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

তেঁতুলের বিবরণ ও উৎপত্তি

তেঁতুলের (বৈজ্ঞানিক নামঃ Tamarindus indica)। তেঁতুল গাছ মূলত সুদৃশ্য ও বৃহৎ চিরসবুজ একটি বৃক্ষ। প্রায় ২৪ মিটার লম্বা হয় তেঁতুল গাছ। বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত থাকে তেঁতুল গাছের শীর্ষ ছাউনি। তেঁতুলের আদিনিবাস মূলত আফ্রিকায়। তবে ভারতীয় উপমহাদেশে অনেক আগে থেকেই তেতুলের চাষ করা হয়। প্রায় কয়েক হাজার বছর আগে মানব পরিবহন ও চাষাবাদ করার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় তেঁতুলের বিস্তার ঘটেছিল। বিশেষ করে গ্রীষ্মমন্ডলী অঞ্চলে বেশ আগে থেকেই তেঁতুলের চাষ করা হতো।

তেঁতুলের উপাদান

কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থাতেই তেঁতুল টক-মিষ্টি হয়ে থাকে। তেঁতুলে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, এসিড, ভিটামিন বি ও চিনি রয়েছে। নিয়মিত তেঁতুল খাওয়ার অভ্যাস করলে অনেক সমস্যা থেকে খুব দ্রুত নিস্তার পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও তেঁতুলে প্রচুর পরিমাণে টারটারিক এসিড রয়েছে যা খাদ্য হজমে কাজ করে থাকে।

তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

তেঁতুল অত্যন্ত উপকারী একটা ফল। মানুষের দেহের অনেক সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় তেঁতুল খাওয়ার ফলে। আপনার দেহের কোন কোন সমস্যায় আপনি তেঁতুল খাবেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হলোঃ
  • ত্বক উজ্জ্বল করতে
ত্বক উজ্জ্বল রাখার জন্য তেঁতুলের ব্যবহার হয়ে আসছে অনেক আগে থেকেই। তেঁতুল প্রচুর পরিমাণে আলফা-হাইড্রোক্সি এসিড রয়েছে যার কারনে ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়। তাছাড়াও টারটারিক অ্যাসিড, ল্যাকটিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড ও সাইট্রিক অ্যাসিড রয়েছে তেঁতুল ফলে। ত্বকের উপরের দাগ নির্মূল করার জন্য তেঁতুলের রস অত্যন্ত কার্যকরী উপাদান।
তেঁতুলের রসে প্রচুর পরিমাণে পেকটিন ও চিনি রয়েছে যা ব্যবহারের ফলে ত্বকের দাগ খুব অল্প সময়ে দূর করা সম্ভব। পাশাপাশি তেঁতুলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি থাকায় ত্বক পুনরুজ্জীবিত করে অকাল বাধ্যক্য রোধ করে। তাই নিজের ত্বককে সুন্দর, উজ্জ্বল ও মসৃণ রাখার জন্য নিয়মিত তেঁতুলের রস ব্যবহার করতে পারেন।
  • দেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতে
যাদের শরীরে অতিরিক্ত ওজন রয়েছে তারা ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত তেঁতুল ব্যবহার করতে পারেন। কেননা অতিরিক্ত ওজনের ফলে কিডনি, লিভার সমস্যা ও হৃদরোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। নিয়মিত তেঁতুল খেলে দেহের ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায় পাশাপাশি খারাপ কোলেস্টেরল কমে আসে তার ফলে দেহে কখনো চর্বি বাধে না।

ফলে আপনার দেহে অতিরিক্ত ওজন হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকবে না। তাই যারা অতিরিক্ত ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা নিয়মিত তেঁতুলের ব্যবহার করতে পারেন।
  • হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে
তেঁতুল ফাইবার সমৃদ্ধ একটি ফল। নিয়মিত তেঁতুল খেলে দেহের হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। কেননা তেঁতুলে প্রচুর পরিমাণে টারটারিক ও ম্যালিক অ্যাসিড রয়েছে, যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমাধান হয় খুব সহজে। তেঁতুলের ছাল এবং মূলের রস নিয়মিত খেলে পেটের ব্যথা এবং ডায়রিয়া জনিত যেকোনো সমস্যা খুব সহজে নিরাময় করা সম্ভব।
  • হার্ট ভালো রাখতে
তেঁতুল উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ একটি ফল যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে থাকে। নিয়মিত তেঁতুল খাওয়ার ফলে শরীরের এলডিএল হ্রাস পায় যার ফলে হার্ট সুস্থ থাকে।
  • ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ করতে
বর্তমান সময়ে বিভিন্ন অঞ্চলে ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয় তেঁতুল কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রয়েছে। অনেক সময় বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের ফলে জ্বর হয়ে থাকে যা থেকে ম্যালেরিয়া সৃষ্টি হয়। নিয়মিত তেঁতুলের রস খাওয়ার ফলে খুব অল্প সময়ে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।
  • চোখ ভালো রাখতে
চোখে ব্যবহৃত ড্রপ তৈরি হয় তেঁতুল থেকে। কেননা তেঁতুলে কিছু বিশেষ উপাদান আছে যা চোখের কার্ভ কে সজল রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি বাইরের ধুলোবালি চোখের ভিতরে গিয়ে যেন কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে না পারে তার জন্য বাধা তৈরি করে। নিয়মিত চোখ পরিষ্কার রাখার জন্য তেঁতুল খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।
  • চুল ভালো রাখতে
মাথার চুল ঠিক রাখার জন্য নিয়মিত মাথায় তেঁতুলের রস ব্যবহার করুন। তার ফলে মাথায় ফলিকলের বৃদ্ধি হবে এবং চুলের গোড়া মজবুত ও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। চুলকে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল, সুন্দর ও মসৃণ রাখার জন্য নিয়মিত তেঁতুলের রস ব্যবহার করুন। পাশাপাশি চুলকে ক্ষতিকারক ইউভি রশ্মি থেকে বাঁচাতে তেঁতুলে থাকা ভিটামিন সি অত্যন্ত কার্যকরী উপাদান।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে
ক্যান্সারের কোষগুলো নির্মূল করার জন্য উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের প্রয়োজন হয়ে থাকে। এবং সেটি পাওয়া যায় তেঁতুল থেকে। কেননা তেঁতুলে প্রচুর পরিমাণে সক্সলেট মিথেনলিক রয়েছে। যা ক্যান্সারের কোষগুলোকে চিরতরে নির্মূল করার জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • রোগ-জীবাণু প্রতিরোধ করতে
যাদের অল্পতেই সর্দি, জ্বর, কাশি দেখা দেয় তারা নিয়মিত তেঁতুলের রস ব্যবহার করতে পারেন কেননা তেঁতুলের রসে অনেক পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি বিদ্যমান থাকায় খুব দ্রুত সর্দি,কাশি, জ্বর সেরে ওঠে। আবার নিয়মিত তেঁতুল খাওয়ার ফলে শরীরে কোন রোগ জীবাণু প্রবেশ করতে পারে না কারণ তেঁতুলে অ্যান্টি-সেপটিক উপাদান রয়েছে। যা শরীরে রোগ-জীবাণু প্রবেশ করাতে বাধা প্রদান করে এবং শরীর সুন্দর ও সতেজ রাখে।

তেঁতুল বেশি খাওয়ার অপকারিতা

প্রত্যেকটা খাবারের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া বিদ্যমান। সেজন্য আপনি যে খাবার গ্রহণ করুন না কেন তা অবশ্যই পরিমাণ মতো খেতে হবে। তাছাড়া দেহের উপকারের চাইতে ক্ষতি বেশি হতে পারে। পাশাপাশি সঠিক উপকার পেতে নিয়মিত তেঁতুল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। তাছাড়া কোন প্রকার উপকৃত হতে পারবেন না। তাই নিজের দেহের সমস্যার সমাধান পেতে নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ তেঁতুল খান।

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক, আর.বি.আর ব্লগ এই আর্টিকেলে তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানানোর পাশাপাশি তেঁতুলের সকল উপকারী গুনাগুন সম্পর্কে আলোচনা করেছে। এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। যেকোন শিক্ষনীয় বিষয় জানতে আর.বি.আর ব্লগ ওয়েবসাইটের সাথে থাকুন। আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url