লালমনিরহাট জেলার অবস্থান ও আয়তন
পঞ্চগড় জেলার অবস্থান ও আয়তনআসসালামু আলাইকুম, সুপ্রিয় পাঠক লালমনিরহাট জেলার অবস্থান ও আয়তন এবং লালমনিরহাট জেলার চিত্রাকর্ষক স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
কেননা আমরা আজকের এই আর্টিকেলে লালমনিরহাট জেলার অবস্থান ও আয়তন এবং লালমনিরহাট জেলার চিত্রাকর্ষক স্থান সহ লালমনিরহাট জেলার সকল তথ্য আপনাকে জানানোর চেষ্টা করেছি। আপনি লালমনিরহাট জেলার সকল তথ্য জানতে পারবেন আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে।
সূচিপত্র: লালমনিরহাট জেলার অবস্থান ও আয়তন
উপস্থাপনা
সুপ্রিয় পাঠক আমাদের এই আর্টিকেল এর মধ্য দিয়ে আপনি লালমনিরহাট জেলার অবস্থান ও আয়তন এবং লালমনিরহাট জেলার চিত্রাকর্ষক স্থান সহ লালমনিরহাট জেলার সকল তথ্য জানতে পারবেন।
পাশাপাশি লালমনিরহাট জেলায় কয়টি উপজেলা, কয়টি পৌরসভা ও কয়টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে এবং লালমনিরহাট জেলার অর্থনীতি, শিক্ষা ব্যবস্থা ও লালমনিরহাট জেলার রেলওয়ে স্টেশন সহ সকল তথ্য জানতে পারবেন। তার পাশাপাশি লালমনিরহাট জেলার উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব কারা সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা আছে আমাদের এই আর্টিকেলে।
লালমনিরহাট নামকরণের ইতিহাস
লালমনিরহাট জেলার নামকরণ নিয়ে বেশ কয়েকটি মতভেদ রয়েছে। সেগুলো হলো মাটির নিচে লাল পাথর দেখা যায় আর তার থেকেই সেই জায়গার নাম হয় লালমনি।
আবার অপরপক্ষের আরেকটি মত রয়েছে সেটি হলো ১৭৮৩ সালের দিকে কৃষকদের অধিকার আদায় করার লক্ষ্যে লালমনি নামে এক মহিলা কৃষক নেতা নুরুল উদ্দীনকে সাথে নিয়ে ব্রিটিশ সৈন্য ও জমিদারের বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিল।
আর সেই থেকে ওই জায়গার নাম হয় লালমনি। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে হার্ট শব্দটি লালমনি শব্দের পরে যোগ করা হয়। সেখান থেকেই লালমনিরহাট নামকরণ করা হয়েছে বলে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়।
লালমনিরহাট জেলার অবস্থান ও আয়তন
লালমনিরহাট জেলা বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলে অবস্থিত রংপুর বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। লালমনিরহাট জেলার উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণে বাংলাদেশের রংপুর জেলা ও কুড়িগ্রাম জেলা, পূর্বে কুড়িগ্রাম জেলা ও পশ্চিমে নীলফামারী জেলা অবস্থিত। লালমনিরহাট জেলার আয়তন হলোঃ ১২৪৭. ৩৭১ বর্গ কিলোমিটার।
লালমনিরহাট জেলার উপজেলা সমূহ
লালমনিরহাট জেলায় বর্তমানে ৫ টি উপজেলা ও ৫ টি থানা রয়েছে।উপজেলা গুলো হলোঃ
- হাতীবান্ধা উপজেলা
- লালমনিরহাট সদর উপজেলা
- পাটগ্রাম উপজেলা
- কালীগঞ্জ উপজেলা
- আদিতমারী উপজেলা
লালমনিরহাট জেলার পৌরসভার সমূহ
বর্তমানে লালমনিরহাট জেলায় ২ কি পৌরসভা রয়েছে।সেগুলো হলোঃ
- পাটগ্রাম পৌরসভা
- লালমনিরহাট পৌরসভা
লালমনিরহাট জেলার ইউনিয়ন পরিষদ সমূহ
বর্তমানে লালমনিরহাট জেলার ৫ টি উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে ৪৫ টি। যেখান থেকে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত নানান সুযোগ সুবিধা ভোগ করে থাকেন। ও লালমনিরহাট জেলায় মৌজা আছে ৩৫৪ টি এবং গ্রাম আছে ৪৭৮ টি।
কোন উপজেলায় কয়টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে তা জানানো হলোঃলালমনিরহাট সদর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে ৯ টি
সেগুলো হলোঃ
সেগুলো হলোঃ
- মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদ
- কুলাঘাট ইউনিয়ন পরিষদ
- মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন পরিষদ
- হারাটি ইউনিয়ন পরিষদ
- খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদ
- রাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ
- গোকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদ
- বড়বাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ
- পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ
সেগুলো হলোঃ
- দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদ
- ভেলাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ
- সারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদ
- সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ
- কমলাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ
- মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদ
- ভাদাই ইউনিয়ন পরিষদ
- পলাশী ইউনিয়ন পরিষদ
সেগুলো হলোঃ
- কাকিনা ইউনিয়ন পরিষদ
- চলবলা ইউনিয়ন পরিষদ
- চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদ
- গোড়ল ইউনিয়ন পরিষদ
- দলগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ
- মদাতী ইউনিয়ন পরিষদ
- তুষভান্ডার ইউনিয়ন পরিষদ
- ভোটমারি ইউনিয়ন পরিষদ
সেগুলো হলোঃ
- ফকিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ
- সানিয়াজান ইউনিয়ন পরিষদ
- ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন পরিষদ
- গোতামারি ইউনিয়ন পরিষদ
- নওদাবাস ইউনিয়ন পরিষদ
- ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ
- পাটিকাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ
- সিন্দুনা ইউনিয়ন পরিষদ
- টংভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ
- সিংগিমারী ইউনিয়ন পরিষদ
- গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদ
- বড়খাতা ইউনিয়ন পরিষদ
সেগুলো হলোঃ
- বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ
- দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ
- বাউরা ইউনিয়ন পরিষদ
- জোংড়া ইউনিয়ন পরিষদ
- জগতবেড় ইউনিয়ন পরিষদ
- পাটগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ
- শ্রীরামপুর ইউনিয়ন পরিষদ
- কুচলীবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ
লালমনিরহাট জেলার অর্থনীতি
লালমনিরহাট জেলা সম্পূর্ণ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। লালমনিরহাট জেলার ৭৮ শতাংশ মানুষ কৃষির সাথে জড়িত। লালমনিরহাট জেলায় কোন প্রকার শিল্প কারখানা নেই বললেই চলে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিক দের বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বেশিরভাগ মানুষই উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা।
তবে বর্তমানে লালমনিরহাট জেলায় প্রচুর পরিমাণে কৃষি পণ্য উৎপাদন করা হয়। যা দেশের বাজারে চাহিদা মেটাতে কাজে আসে।
লালমনিরহাট জেলার শিক্ষা ব্যবস্থা
বর্তমান সময়ে সারা বাংলাদেশে শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। লালমনিহাট জেলা ও শিক্ষা প্রসারের দিক থেকে কোনরকম পিছিয়ে নেই সরকারি বেসরকারি নানান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে লালমনিরহাট জেলায়।
আরো পড়ুন: রাজশাহী জেলার শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে
বর্তমান সময়ে প্রায় ৬৫ শতাংশ মানুষ শিক্ষিত লালমনিরহাট জেলার। লালমনিরহাট জেলার উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছেঃ
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন এন্ড এবং অ্যারোম্পেস বিশ্ববিদ্যালয়
- লালমনিরহাট সরকারি নার্সিং কলেজ
- হাতীবান্ধা এস এস সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
- আলিমুদ্দিন সরকারি কলেজ
- লালমনিরহাট সরকারি কলেজ
- মজিদা খাতুন সরকারি মহিলা কলেজ
- পাটগ্রাম সরকারি কলেজ
- করিম উদ্দিন সরকারি কলেজ
- লালমনিরহাট সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়
- লালমনিরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
লালমনিরহাট জেলার রেলওয়ে স্টেশন সমূহ
সরকারি সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান হলো বাংলাদেশ রেলওয়ে। আমাদের দেশে রেলের ব্যবহার হয়ে আসছে ব্রিটিশ আমল থেকে। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার সাধারণ মানুষের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতের জন্য রেল পরিষেবা প্রদান করে থাকে। যার ফলে মানুষ দেশের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে খুব সহজে।
আরো পড়ুন: পাবনা জেলার রেলওয়ে স্টেশন সম্পর্কে
রেলে যাতায়াতের জন্য রেলওয়ে স্টেশন স্থাপন করা হয় দেশের বিভিন্ন জায়গায়। তার ধারাবাহিকতায় লালমনিরহাট জেলায় বর্তমানে ১৭ টি রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে। যা দিয়ে বাংলাদেশ সরকার সাধারণ মানুষদের রেল পরিষেবা প্রদান করে থাকে। লালমনিরহাট জেলার রেলওয়ে স্টেশনের নাম হলোঃ
- হাতীবান্ধা রেলওয়ে স্টেশন
- শহীদ বোরহান নগর রেলওয়ে স্টেশন
- লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশন
- রইসবাগ রেলওয়ে স্টেশন
- মোগলহাট রেলওয়ে স্টেশন
- মহেন্দ্রনগর রেলওয়ে স্টেশন
- ভোটমারি রেলওয়ে স্টেশন
- বুড়িমারী রেলওয়ে স্টেশন
- বাউরা রেলওয়ে স্টেশন
- বড়খাতা রেলওয়ে স্টেশন
- পাটগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন
- নামুরিরহাট রেলওয়ে স্টেশন
- তুষ ভান্ডার রেলওয়ে স্টেশন
- তিস্তা জংশন রেলওয়ে স্টেশন
- কাকিনা রেলওয়ে স্টেশন
- আলাউদ্দিননগর রেলওয়ে স্টেশন
- আদিতমারী রেলওয়ে স্টেশন
লালমনিরহাট জেলার উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
সময়ের ব্যবধানে অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষের জন্ম হয়েছিল লালমনিরহাট জেলায়। যারা নিজেদের কর্মের মধ্য দিয়ে চিরস্মরণীয় রয়েছেন আমাদের দেশের ইতিহাসে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
- তমিজউদ্দিন প্রামানিক, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীর বিক্রম
- শেখ ফজলল করিম, স্বনামধন্য সাহিত্যিক
- ফকির মজনু শাহ, ভারতীয় ফকির ও সাধক
- আসাদুল হাবিব দুলু, সাবেক উপমন্ত্রী
- মুসা ইব্রাহীম, বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী
- সাথীরা জাকির, সাবেক ক্রিকেটার
- করিম উদ্দিন আহমেদ, সাবেক সংসদ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক
- নুরুজ্জামান আহমেদ, সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী
- চিত্তরঞ্জন দেব, স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য
- মোহাম্মদ মোতাহার হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী
- জি.এম কাদের রাজনীতিবিদ ও সাবেক মন্ত্রী এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান
- সাফিয়া খাতুন, ভাষা সৈনিক ও সাবেক সংসদ সদস্য
- মোঃ আবুল কাশেম, কৃষিবিদ
- রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক মন্ত্রী
লালমনিরহাট জেলার উল্লিখিত নদ-নদী
নদীমাতৃক আমাদের এই বাংলাদেশে সব জায়গায় বিভিন্ন নদীর শাখা-প্রশাখা দেখা যায়। যা আমাদের দেশের সৌন্দর্যের বাহক হিসেবে কাজ করে থাকে। তার মধ্যে লালমনিরহাট জেলার উল্লিখিত নদ-নদী হলোঃ
- তিস্তা নদী
- রত্নাই নদী
- স্বর্ণামতি নদী
- মালদহ নদী
- ভাটেশ্বরী নদী
- গিরীধারী নদী
- ত্রিমোহনী নদী
- শিংমারি নদী
- সানিয়াজান নদী
- সতী নদী
- ধরলা নদী
লালমনিরহাট জেলার চিত্রাকর্ষক স্থান
কালের ব্যবধানে অনেক দর্শনীয় স্থান গড়ে উঠেছিল লালমনিরহাট জেলায়। যেসব স্থান দেখার জন্য বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ লালমনিরহাট জেলা এসে থাকেন। সেই সব স্থানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
- ৬৯ হিজরির হারানো মসজিদ
- লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশন
- তিস্তা ব্যারেজ
- লালমনিরহাট বিমানবন্দর
- তিনবিঘা করিডর
- তিস্তা রেল সেতু
- সিন্দুর মতি
- শেখ রাসেল শিশু পার্ক
- মোগল হাট রেলবন্দর
- সুকানদিঘী, গোকুন্ডা হালা বটগাছ
- ভূমি গবেষণা জাদুঘর
- বুড়িমারী স্থলবন্দর জিরো পয়েন্ট
- জমগ্রাম জামে মসজিদ
- শালবন
- তুস ভান্ডার জমিদার বাড়ি কালীমন্দির
- এক উঠানে মসজিদ ও মন্দির
- কাকিনা জমিদার বাড়ি
- কবি শেখ ফজলুল করিমের বসত
- ঐতিহ্যবাহী সিন্ধুরমতি মন্দির
শেষ কথা
আজকের আর্টিকেলে লালমনিরহাট জেলার অবস্থান ও আয়তন এবং লালমনিরহাট জেলার চিত্রাকর্ষক স্থান সহ লালমনিরহাট জেলার বিস্তারিত আলোচনা করা আছে। আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই এটি অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। যেকোনো শিক্ষনীয় বিষয় জানতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url