চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অবস্থান ও আয়তন

রাজশাহী জেলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুনআসসালামু আলাইকুম, সুপ্রিয় পাঠক চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অবস্থান ও আয়তন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ নামকরণের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অবস্থান ও আয়তন
কেননা এই আর্টিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সকল তথ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। পাশাপাশি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ঐতিহাসিক স্থান ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অর্থনীতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সঠিক তথ্য জানতে চান তাহলে আর্টিকেলটি পড়ুন।
সূচিপত্র: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অবস্থান ও আয়তন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নামকরণের ইতিহাস

২০০১ সালের ১লা আগস্ট নবাবগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ নামে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। সেখান থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ নামের উৎপত্তি ছড়িয়ে পড়ে। পূর্বে এই এলাকা নবাবগঞ্জ নামে পরিচিত ছিল। যতদূর জানা যায় পাক ব্রিটিশ আমলে নবাবগঞ্জ জেলা মুর্শিদাবাদের নবাবের বিহার ভূমি এবং তার অবস্থান ছিল বর্তমান সদর উপজেলার দাউদপুর মৌজায়।
সে সময় নবাবরা তাদের পাত্র মিত্র ও পরিষদের লোক জন নিয়ে এখানে স্বীকার করার জন্য আসতেন তার ফলে স্থানের ধাপ হয় নবাবগঞ্জ। নবাব আমলে মহেশপুর গ্রামের চম্পাবতি বা চম্পারানী নামের এক সুন্দরী বাঈজি বাস করতেন। যার নৃত্যের খ্যাতি আশেপাশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তার পাশাপাশি সে নবাবের প্রিয় পাত্রি হয়ে উঠে ছিলেন।

আর তার নাম অনুসারেই এই জাইগার নাম হয় চাঁপাই। আবার অনেকের মতে ওই অঞ্চলে রাজা লক্ষিন্দরের বাসভূমি ছিল। রাজা লক্ষিন্দরের রাজধানীর নাম ছিল চম্পক। আর চম্পক নাম থেকে চাঁপাই নামের উৎপত্তি। ১৯৮৪ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ একক জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অবস্থান ও আয়তন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাংলাদেশের সর্ব পশ্চিমের জেলা। যা রাজশাহী বিভাগের অন্তর্গত একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্বে বাংলাদেশের রাজশাহী জেলানওগাঁ জেলা অবস্থিত। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আয়তন হলো, ১,৭০২.৫৬ বর্গ কিলোমিটার।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার উপজেলা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় উপজেলা আছে ৫ টি
সেগুলো হলোঃ
  • শিবগঞ্জ উপজেলা
  • ভোলাহাট উপজেলা
  • নাচোল উপজেলা
  • গোমস্তাপুর উপজেলা
  • চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সংসদীয় আসন রয়েছে ৩ টি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পৌরসভা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় পৌরসভা আছে ৪ টি
সেগুলো হলোঃ
  • চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা
  • শিবগঞ্জ পৌরসভা
  • রহনপুর পৌরসভা
  • নাচোল পৌরসভা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ইউনিয়ন পরিষদ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ৫ টি উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে ৪৫ টি। যেখান থেকে মানুষ প্রতিনিয়ত নানা রকম সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকেন। তাছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় মৌজা আছে ৭৮৭ টি ও গ্রাম আছে ১,২৯৪ টি।
কোন উপজেলায় কয়টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে তা জানানো হলো,

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে ১৪ টি

সেগুলো হলোঃ
  • সুন্দরপুর ইউনিয়ন পরিষদ
  • নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদ
  • চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ
  • ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদ
  • শাজাহানপুর ইউনিয়ন পরিষদ
  • দেবীনগর ইউনিয়ন পরিষদ
  • চরঅনুপনগর ইউনিয়ন পরিষদ
  • ঝিলিম ইউনিয়ন পরিষদ
  • গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদ
  • বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ
  • রানিহাটি ইউনিয়ন পরিষদ
  • মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ
  • বারঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ
  • আলাতুলি ইউনিয়ন পরিষদ
শিবগঞ্জ উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে ১৫ টি
সেগুলো হলোঃ
  • উজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদ
  • কানসাট ইউনিয়ন পরিষদ
  • শ্যামপুর ইউনিয়ন পরিষদ
  • শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ
  • ছত্রাজিতপুর ইউনিয়ন পরিষদ
  • পাকা ইউনিয়ন পরিষদ
  • নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ
  • মনাকষা ইউনিয়ন পরিষদ
  • মোবারকপুর ইউনিয়ন পরিষদ
  • ঘোড়াপাখিইয়া ইউনিয়ন পরিষদ
  • দুর্লভপুর ইউনিয়ন পরিষদ
  • ধাইনগর ইউনিয়ন পরিষদ
  • দাইপুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ
  • চককীর্তি ইউনিয়ন পরিষদ
  • বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদ
গোমস্তাপুর উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে ৮ টি
সেগুলো হলোঃ
  • আলিনগর ইউনিয়ন পরিষদ
  • গোমস্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদ
  • চৌডালা ইউনিয়ন পরিষদ
  • পার্বতীপুর ইউনিয়ন পরিষদ
  • বাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ
  • বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ
  • রহনপুর ইউনিয়ন পরিষদ
  • রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদ
নাচোল উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে ৪ টি
সেগুলো হলোঃ
  • নাচোল ইউনিয়ন পরিষদ
  • নেজামপুর ইউনিয়ন পরিষদ
  • কসবা ইউনিয়ন পরিষদ
  • ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদ
ভোলাহাট উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে ৪ টি
সেগুলো হলোঃ
  • দলদলী ইউনিয়ন পরিষদ
  • গোহালবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ
  • জামবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ
  • ভোলাহাট ইউনিয়ন পরিষদ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রেলওয়ে স্টেশন

সরকারি সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান হল বাংলাদেশের রেলওয়ে। যার কার্যক্রম সারাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে। সাধারণ মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য বাংলাদেশ সরকার রেলওয়ে পরিচালনা করে থাকে। সাধারণ মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে তার জন্য রেলওয়ে স্টেশন স্থাপন করা হয়।

সে ধারাবাহিকতায় চাপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৭ রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে যা থেকে মানুষ বিভিন্ন গন্তব্যে ভ্রমণ করতে পারে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় অবস্থিত রেলওয়ে স্টেশন গুলো হলোঃ
  • আমনুরা জংশন রেলওয়ে স্টেশন
  • আমনুরা বাইপাস রেলওয়ে স্টেশন
  • গোলাবাড়ি রেলওয়ে স্টেশন
  • চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন
  • নাচোল রেলওয়ে স্টেশন
  • নিজামপুর রেলওয়ে স্টেশন
  • রহনপুর রেলওয়ে স্টেশন

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নদ-নদী

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ছোট মাঝারি বড় সব মিলিয়ে অনেকগুলো নদী রয়েছে তবে উল্লেখযোগ্য ৪ টি নদী বেশ প্রসারিত তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
  • পদ্মা নদী
  • মহানন্দা নদী
  • পুনভবা নদী
  • পাগলা নদী

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অর্থনীতি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অর্থনীতি মূলত কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কেননা এই জেলার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে। এবং তারা কৃষি কাজ করে নিজেদের জীবন নির্ভর করে। তবে কিছু কিছু মৌসুমী ব্যবসা রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। যেমনঃ আমের মৌসুমে আমের ব্যবসা, লিচুর মৌসুমে লিচুর ব্যবসা সহ আরো নানামুখী ব্যবসা।

তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় প্রচুর পরিমানে কৃষি পণ্য উৎপাদন করা হয়। উল্লেখযোগ্য হলোঃ টমেটো, পান, আলু, মিষ্টি কুমড়া সহ মৌসুম অনুযায়ী বিভিন্ন রকমের ফসল। আবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা তাদের জন্য সারা বাংলাদেশে পরিচিত। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুরো জেলায় আপনি যদি ভ্রমণ করে থাকেন তাহলে একটা জিনিস চোখে পড়বে সেটা হলো আম বাগান।
কেননা বাংলাদেশের আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত চাপাই নবাবগঞ্জ। চাপাইনবাবগঞ্জে উৎপাদিত আমের মধ্যে রয়েছে ফজলি, ল্যাংড়া, মোহনভোগ, ক্ষিরসাপাত, আশ্বিনা, বোম্বাই অন্যতম। তাছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় প্রচুর লিচু উৎপাদন হয়ে থাকে। যা সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়। আর এভাবে চাপাই নবাবগঞ্জ জেলার অর্থনীতি সচল রয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

অনেক প্রাচীনকাল থেকেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। কেননা রাজশাহীর পাশাপাশি চাপাইনবাবগঞ্জ জেলাতেও অনেক দামী দামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখান থেকে অনেক ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা শিখে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন কর্ম পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। সারা বাংলাদেশের ন্যায় চাপাইনবাবগঞ্জ শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে অনেকটা এগিয়ে এসেছে।

মানুষের শিক্ষা গ্রহণের আগ্রহ জন্মানোর পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। যেখান থেকে সাধারণ মানুষ সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ চাঁপাইনবাবগঞ্জে আসে পড়াশোনা শেখার জন্য।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ঐতিহাসিক স্থান

চাঁপাইনবাবগঞ্জ অনেক প্রাচীন একটি জায়গা। যুগে যুগে নানা স্থাপনা গড়ে উঠেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জকে ঘিরে। বর্তমান সময়ও যার নিদর্শন চোখে পড়ার মতো। আপনি যদি চাঁপাইনবাবগঞ্জ ভ্রমণ করতে যান তাহলে যেগুলো ঐতিহাসিক স্থাপনা আপনি দেখতে পাবেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
  • ঐতিহাসিক সোনামসজিদ
যেখানে বর্তমানে বাংলাদেশের একটি স্থলবন্দর অবস্থিত। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব পেয়ে থাকে প্রতি বছর। দেশের বাইরে থেকে অনেক পণ্য সামগ্রী আদান-প্রদান হয়ে থাকে সোনা মসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে। যা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার প্রাচীনতম একটি নিদর্শন। তাছাড়া আরো রয়েছে,
  • দরাসবাড়ি মসজিদ
  • খনিয়া দিঘী
  • নওদা বুরুজ
  • বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের সমাধি
  • খনিয়া দিঘি
  • শাহ নিয়ামতুল্লাহ ওয়ালির সমাধি
  • শাহ নিয়ামতুল্লাহ মসজিদ

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক, আর.বি.আর ব্লগ এই আর্টিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অবস্থান ও আয়তন সহ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সকল তথ্য নিয়ে আলোচনা করেছে। আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। যেকোনো ধরনের শিক্ষনীয় তথ্য জানতে আর.বি.আর ব্লগের গুগল নিউজে ফলো দিয়ে রাখুন। আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url