বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালন করার পদ্ধতি জানুন

বাণিজ্যিকভাবে গরুর খামার তৈরি করার পদ্ধতি জানুনআসসালামু আলাইকুম, সুপ্রিয় পাঠক বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালন করার পদ্ধতি জানুন ও হাঁসের রোগ-বালাই প্রতিকার করা যায় কিভাবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালন করার পদ্ধতি জানুন
কেননা আমাদের এই আর্টিকেলে হাঁস পালন করার পদ্ধতি ও হাঁসের রোগ-বালাই নির্ণয় করা সহ হাঁস পালনের সকল পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
সূচিপত্রঃ বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালন করার পদ্ধতি জানু

উপস্থাপনা

প্রিয় পাঠক, বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালন করার পদ্ধতি জানুন ও হাঁসের রোগ-বালাই প্রতিকার করা যায় কিভাবে তা সহ হাঁস পালনের যাবতীয় তথ্য সম্পর্কে আমাদের আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে। পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালন করার জন্য কোন জাতের হাঁস নির্বাচন করবেন কিভাবে খাদ্য দেবেন ও কতদিন পরে ডিম পাবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

হাঁসের বাসস্থান তৈরি

বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালন করতে চাইলে প্রথমে আপনাকে যে কাজ করতে হবে সেটি হল হাঁস রাখার জন্য নিরাপদ বাসস্থান তৈরি করতে হবে। হাঁসের বাসস্থান তৈরির জন্য আপনি বাঁশ, বেত, টিন, ছন, খড় ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। তবে যদি সম্ভব হয় তাহলে হাঁসের জন্য ইট দিয়ে ঘর তৈরি করে দিতে পারেন তবে সেটি অনেক মজবুত হবে।

ঘর তৈরি সময় খেয়াল রাখতে হবে যে পোকামাকড়, জীবজন্তু যেন হাঁসের কোন ক্ষতি করতে না পারে। আবার বাইরে থেকে পর্যাপ্ত আলো বাতাস যাতে ভিতরে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। হাঁস যাতে বাইরে আসতে পারে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে হাঁসের বাসস্থান তৈরি করার সময়।

হাঁসের জাত নির্বাচন করা

বর্তমান বিশ্বে নানা প্রজাতির হাঁস দেখা যায়। জাত ভেদে তাদের নামও ভিন্ন রকমের হয়। তবে আমাদের দেশেও উন্নত জাতের বেশ কিছু হাঁস রয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল খাকি ক্যাম্বেবেল, সিলেট মিটি, নাগেশ্বরী ও ইন্ডিয়ান রানার এবং দেশি হাঁসের জাত নির্বাচন করা যায় পালন করার জন্য।

হাঁসের যত্ন নেওয়া

হাঁস পালন করার জন্য বেশি পরিশ্রম করার প্রয়োজন পড়ে না। কেননা প্রায় সব জায়গায় হাঁস পালন করা যায়। তবে তার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন, আপনি চাইলে উঁচু-নিচু, জল বা স্যাতসেতে, শুকনো খটখটে প্রায় সব জায়গায় হাঁস পালন করতে পারেন। কেননা হাঁস সব পরিবেশেই খাপ খাইয়ে নেই। বিশেষ করে স্যাতসেতে এবং জল এ দুটো পরিবেশ হাঁসের বেশ পছন্দ।

তবে হাঁস পালন করতে গেলে সবচাইতে বেশি প্রয়োজন পড়ে হল হাঁসের বাসস্থান পরিষ্কার রাখার। পাশাপাশি যাতে কোনো রোগ-বালায় না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার এবং নিয়মিত হাঁসকে ঔষধ খাওয়ানো। আর ঠিক এভাবেই হাঁসের যত্ন নেওয়া যায়।

হাঁসকে নিয়মিত খাবার দেওয়া

হাঁসের খাবার অনেকটা সহজলভ্য। হাঁস পালনের জন্য আলাদা কোন সুষম খাদ্য দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কেননা বর্তমান বাজারে খামারে মুরগি পালন করার জন্য যে সমস্ত পশু খাদ্য মিক্সচারই পাওয়া যায় সেটাই হাঁসকে খাওয়ানো যায়। তাছাড়া হাঁস ছোট মাছ, ক্ষুদেপানা, শামুক, ঝিনুক, কেঁচো, শাপলা, কাঁকড়া ও নানা ধরনের কীটপতঙ্গ খেয়ে থাকে। এগুলো খাবার মূলত পুকুরে পাওয়া যায় তার জন্য নিয়মিত হাঁসকে পুকুরে ছাড়তে হবে।

এছাড়াও শুধু সকাল ও বিকেলে পরিমাণ মতো দানাদার খাবার সরবরাহ করলেই খুব অল্প সময়ে হাঁস বড় এবং মোটাতাজা হয়ে উঠবে। বিশেষ করে হাঁসের ছোট বাচ্চাকে খাবার দেওয়ার সময় মাথায় রাখতে হবে যে খাবারের সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি যেন দেওয়া থাকে। তাছাড়া শুকনো খাবার হাঁসের বাচ্চার গলায় আটকে গিয়ে বাচ্চার প্রাণ হানি ঘুটতে পারে।

হাঁসের রোগ-বালাই প্রতিকার করা

হাঁস পালন করার ক্ষেত্রে হাঁসের বেশ কিছু রোগ বালাই দেখা যায়। তবে হাঁসের মারাত্মক দুটি রোগ হলো ডাক-কলেরা ও ডাক-প্লেগ। এ দুটো রোগ থেকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই হাঁসকে টিকা দিতে হবে। আবার যদি কোন হাঁস অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে যথাশীঘ্রই অসুস্থ হওয়া হাঁসকে বাকি হাঁসের সংস্পর্শ থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে অন্য জায়গায়। তাছাড়া অসুস্থ হাঁসের কারনে বাঁকি হাঁস গুলো অসুস্থ হতে পার।

হাঁস পালনের সুবিধা ও অসুবিধা

আমাদের দেশের আবহাওয়া হাস পালনে খুবই উপযোগী। আবার বর্তমান সময়ে হাঁসের ডিম ও হাঁসের মাংসের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। এজন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় হাঁসের খামার গড়ে তোলা হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। বিশেষ করে যেখানে মাছ চাষ করা হয় সেই পুকুরের পাশে বাণিজ্যিকভাবে হাঁসের খামার করা হচ্ছে বর্তমান সময়ে। কেননা মাছ চাষ করা হয় এমন পুকুরে হাঁস পালন করলে খুব কম খরচে অনবরত জৈব সার পাওয়া যায়।

আবার বাসা বাড়িতে হাঁস পালন করলে খরচ অত্যন্ত কম হয়। বাণিজ্যিকভাবে খামারে হাঁস পালন করলেও আপনি স্বল্প খরচে বেশি মুনাফা পেতে পারেন। তার জন্য হাঁসকে পুকুরে ছাড়তে হবে সেখান থেকে হাঁস বাড়তি খাবার পাবে। তাতে করে আপনার খাবারের খরচ অনেকটা কমে যাবে। তেমনি ভাবে হাঁস পালনের সুবিধা অনেক হাঁস পালন করলে সারা বছর ডিম পাওয়া যায়।

ডিম পাওয়া শেষে হাঁসের মাংসের চাহিদা বেশি থাকায় ভালো দামে বাজারে হাস বিক্রি করা যায়। বর্তমানে ক্যাম্পবেল হাঁস বছরে ২৮০ থেকে ৩০০ টা ডিম দিয়ে থাকে, দেশি হাঁস ২৪০ থেকে ২৫০ টা ডিম দেয় এক বছরে। আবার হাঁসের রোগ তুলনামূলক অনেক কম হয়। যার জন্য বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালন করলে স্বল্প সময়ে বেশি মুনাফা পাওয়া যায়।

তবে হাঁস পালনের কিছু অসুবিধা রয়েছে সেগুলো হলো হাসকে নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে, দেখাশোনা করতে হবে, সময় মত পর্যাপ্ত দানাদার খাবার দিতে হবে, সন্ধ্যার সময় হাঁসের বাসস্থানে হাঁস আসছে কিনা সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বর্তমান সময় হাঁস পালন করলে অসুবিধার চাইতে সুবিধা বেশি পাওয়া যাবে।

হাঁস পালন করা উপায়

হাঁস পালনে অপেক্ষাকৃত কম পুজিতে বেশি লাভ হয়। খাল, বিল, দিঘি ও উন্মুক্ত জায়গায় যেখানে পানি থাকে সেখানে হাঁস পালন করা যায় বাণিজ্যিকভাবে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের হাওর এলাকায় বিশেষ করে নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, ভোলা, গাইবান্ধা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাণিজ্যিকভাবে হাঁসের খামার গড়ে তোলা হয়েছে। সেখান থেকে বছরে প্রায় পাঁচ কোটি হাঁসের উৎপাদন হয়ে থাকে।

বিশেষ করে হাঁসের রোগ বালাইয়ের ঝুঁকি অনেক কম থাকার পাশাপাশি খাদ্য খরচ অনেক কম হয়। যার জন্য স্বল্প পুঁজিতে মুনাফা বেশি পাওয়া যায় খুব কম সময়ে। যেমন উন্নত জাতের একটি হাঁস বছরের ডিম দেয় ৩০০ টির অধিক সেখানে দেশি হাঁস ডিম দেয় ১২০ থেকে ১৪০ টির মত। সে কারণে বর্তমান সময়ে নদী, পুকুর, দিঘী যেখানে পানি থাকে সেখানে মানুষ বাণিজ্যিকভাবে হাঁসের খামার গড়ে তুলেছে।

এবং তাতে দেশী জাতের পাশাপাশি উন্নত জাতের হাঁস পালন করা হয়। বিশেষ করে বড় বড় পুকুর ও দীঘিতে হাঁসের খামার গড়ে তোলা হয়েছে তাতে করে পুকুর থেকে হাঁস পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার আহরণ করে এবং পুকুরে যেসব মাছ রয়েছে তারাও হাসের কাছ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ জৈব খাবার পেয়ে থাকে। যার ফলে মাছ এবং হাঁস দুটোই পালন করা হয়ে থাকে এবং কম সময়ে অধিক মুনাফা পাওয়া যায় খুবই কম খরচে।

তার পাশাপাশি বর্তমান সময়ে হাঁসের খামার গড়ে তুলে অনেক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে এবং বেকারত্ব দূর হচ্ছে।

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক, বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালন করার পদ্ধতি জানুন ও হাঁসের রোগ-বালাই প্রতিকার করা সহ হাঁসের যাবতীয় বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই আর্টিকেলে। এই আর্টিকেল আপনার ভালো লেগে থাকলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। যেকোনো বিষয়ের সঠিক তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url